মলদ্বারের ব্যথা কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের মলম বা ক্রিম পাওয়া যায়। আপনার ব্যথার কারণের উপর নির্ভর করে কোন মলমটি সবচেয়ে উপযুক্ত হবে। কোন মলম ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ মলদ্বারের ব্যথা পাইলস (hemorrhoids), ফিশার (anal fissure), ফোড়া (abscess) বা অন্য কোনো কারণে হতে পারে, এবং প্রতিটি কারণের জন্য আলাদা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
সাধারণভাবে, মলদ্বারের ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবহৃত কিছু মলম এবং তাদের উপাদান নিচে উল্লেখ করা হলো:
পাইলসের জন্য ব্যবহৃত মলম:
- কর্টিকোস্টেরয়েড (Corticosteroids): যেমন হাইড্রোকর্টিসোন (Hydrocortisone)। এটি প্রদাহ এবং চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। তবে, এটি দীর্ঘকাল ব্যবহার করা উচিত নয় কারণ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।
- অ্যানেস্থেটিক (Local Anesthetics): যেমন লিডোকেন (Lidocaine), বেনজোকেইন (Benzocaine)। এটি সাময়িকভাবে ব্যথা এবং অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।
- অ্যাস্ট্রিনজেন্ট (Astringents): যেমন উইচ হ্যাজেল (Witch Hazel)। এটি টিস্যু সঙ্কুচিত করতে এবং ফোলা কমাতে সাহায্য করে।
- অ্যান্টিসেপটিক (Antiseptics): সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
- কিছু মলমে একাধিক উপাদানের মিশ্রণ থাকে যা ব্যথা, প্রদাহ এবং চুলকানি কমাতে সাহায্য করে।
ফিশারের জন্য ব্যবহৃত মলম:
- নাইট্রোগ্লিসারিন মলম (Nitroglycerin Ointment): এটি মলদ্বারের স্ফিঙ্কটার পেশী শিথিল করতে সাহায্য করে, যা রক্ত প্রবাহ বাড়ায় এবং ফিশার নিরাময়ে সহায়তা করে এবং ব্যথা কমায়। এটি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত।
- ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার মলম (Calcium Channel Blocker Ointment): যেমন ডিলটিয়াজেম (Diltiazem) মলম, একই রকমভাবে স্ফিঙ্কটার পেশী শিথিল করতে সাহায্য করে। এটিও ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত।
- স্থানীয় অ্যানেস্থেটিক মলম: ব্যথা উপশমের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
অন্যান্য কারণে ব্যথার জন্য:
- যদি ব্যথার কারণ সংক্রমণ হয়, তবে অ্যান্টিবায়োটিক মলমের প্রয়োজন হতে পারে, যা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে।
- সাধারণ ব্যথানাশক মলম (যেমন আইবুপ্রোফেন বা ডাইклоফেনাকযুক্ত) হালকা ব্যথায় কিছুটা আরাম দিতে পারে, তবে মলদ্বারের ব্যথার জন্য বিশেষভাবে তৈরি মলম বেশি কার্যকর হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
- কখনোই নিজের ইচ্ছামত মলম ব্যবহার করবেন না।
- আপনার মলদ্বারের ব্যথার সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন (যেমন একজন কলোরেক্টাল সার্জন বা গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট)।
- ডাক্তার আপনার লক্ষণ, শারীরিক পরীক্ষা এবং প্রয়োজনে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক রোগ নির্ণয় করবেন এবং সেই অনুযায়ী মলম বা অন্যান্য চিকিৎসার পরামর্শ দেবেন।
- ডাক্তারের দেওয়া নির্দেশাবলী সঠিকভাবে অনুসরণ করুন এবং মলম ব্যবহারের সময় কোনো অস্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখলে ডাক্তারকে জানান।
- মলম ব্যবহারের পাশাপাশি, পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য এড়ানো মলদ্বারের ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে।
মনে রাখবেন, সঠিক রোগ নির্ণয় এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করাই মলদ্বারের ব্যথা কমানোর সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর উপায়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন