সিজারের পর পেট কমানোর উপায়,সিজারের পর খাবার তালিকা

 

সিজারের পর মায়ের শরীরের দ্রুত পুনরুদ্ধার এবং নবজাতকের স্বাস্থ্যের জন্য সঠিক খাবার তালিকা অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হজমক্ষমতা এবং শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক খাবারের দিকে অগ্রসর হতে হয়। নিচে একটি সাধারণ খাবার তালিকা দেওয়া হলো, তবে আপনার ব্যক্তিগত অবস্থার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এটি পরিবর্তন হতে পারে:

প্রথম কয়েক দিন (হাসপাতালে থাকার সময়):

  • প্রথম ৬ ঘণ্টা: সাধারণত কিছুই খেতে দেওয়া হয় না। শুধু মুখ ভেজা রাখা বা বরফ কুচি চোষার অনুমতি থাকতে পারে।
  • ৬-১২ ঘণ্টা পর: তরল খাবার যেমন - হালকা গরম জল, ডাবের জল, পাতলা স্যুপ (যেমন সবজির স্টক বা চিকেন স্টক)।
  • ১২-২৪ ঘণ্টা পর: ধীরে ধীরে নরম খাবার যেমন - পাতলা খিচুড়ি, সুজি, সাগু, ফলের রস (যেমন আপেল বা আঙুরের রস), হালকা মিষ্টি দই।

বাসায় ফেরার পর (প্রথম সপ্তাহ):

  • সহজপাচ্য খাবার: এমন খাবার গ্রহণ করুন যা সহজে হজম হয় এবং পেটে গ্যাস তৈরি করে না।
    • শস্য: নরম খিচুড়ি, পাতলা পোলাও, সুজি, ওটস, লাল চালের ভাত।
    • ডাল: মসুর ডাল বা মুগ ডালের পাতলা ঝোল।
    • সবজি: ভালোভাবে সেদ্ধ করা আলু, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, গাজর, ঝিঙে, পটল। কাঁচা সবজি বা গ্যাস সৃষ্টিকারী সবজি (যেমন বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি) এড়িয়ে চলুন।
    • ফল: পাকা কলা, আপেল সেদ্ধ বা পিউরি, পেঁপে, তরমুজ। টক ফল আপাতত এড়িয়ে চলুন।
    • আমিষ: ডিম সেদ্ধ (প্রথম কয়েক দিন শুধু ডিমের সাদা অংশ), মুরগির হালকা ঝোল (তেল ও মসলা ছাড়া)। ধীরে ধীরে মাছের হালকা ঝোল যোগ করা যেতে পারে।
    • দুগ্ধজাত: হালকা গরম দুধ (যদি হজমে সমস্যা না হয়), মিষ্টি দই।

পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ (২-৬ সপ্তাহ):

  • ধীরে ধীরে আপনার স্বাভাবিক খাবারের দিকে ফিরে যেতে পারেন, তবে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
    • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: ডিম, মাছ, মাংস, ডাল, পনির - এগুলো শরীরকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে এবং শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।
    • আয়রন সমৃদ্ধ খাবার: সবুজ শাকসবজি, কলিজা, ডিমের কুসুম - রক্তাল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক।
    • ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: দুধ, দই, পনির, সবুজ শাকসবজি - হাড়ের স্বাস্থ্য এবং বুকের দুধের জন্য জরুরি।
    • ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার: লেবু, কমলা, পেয়ারা (অল্প পরিমাণে), আমলকি - রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
    • ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: ধীরে ধীরে খাদ্যতালিকায় ফাইবার যুক্ত করুন, যেমন - আটা, লাল চাল, সবজি ও ফল। তবে অতিরিক্ত ফাইবার প্রথম দিকে হজমের সমস্যা করতে পারে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান: প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস জল পান করা জরুরি। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করবে এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখবে। বুকের দুধ তৈরির জন্যও পর্যাপ্ত জল পান করা আবশ্যক।

যে খাবারগুলো এড়িয়ে যাওয়া উচিত:

  • গ্যাস সৃষ্টিকারী খাবার: বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, মটরশুঁটি, পেঁয়াজ, রসুন (প্রথম কয়েক সপ্তাহ)।
  • তৈলাক্ত ও ভাজা খাবার: এগুলো হজম হতে বেশি সময় নেয় এবং পেটে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
  • মসলাদার খাবার: অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার পেটে জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে।
  • ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার: এগুলোতে পুষ্টি কম এবং অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট বেশি থাকে।
  • ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল: এগুলো বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে যেতে পারে এবং মায়ের শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে।
  • টক ফল ও সাইট্রাস জাতীয় খাবার (প্রথম কয়েক দিন): এগুলো কারো কারো ক্ষেত্রে পেটে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:

  • ছোট এবং ঘন ঘন খাবার খান: একবারে বেশি না খেয়ে অল্প পরিমাণে খাবার কয়েকবার খান।
  • ধীরে ধীরে চিবিয়ে খান: ভালোভাবে চিবিয়ে খেলে হজম সহজ হয়।
  • খাবার খাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো করবেন না।
  • কোনো বিশেষ খাবারে অসুবিধা হলে তা এড়িয়ে চলুন এবং ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
  • বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যান: বুকের দুধ নবজাতকের জন্য সর্বোত্তম খাবার এবং এটি মায়ের শরীরকেও দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।

সিজারের পর সঠিক খাবার তালিকা মেনে চললে আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং আপনার শিশুও প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে। আপনার স্বাস্থ্যকর্মীর বা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার তালিকা অনুসরণ করাই সবচেয়ে ভালো।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন