হলুদ দুধ, যা 'গোল্ডেন মিল্ক' নামেও পরিচিত, এটি একটি প্রাচীন পানীয় যা স্বাস্থ্যগত উপকারিতার জন্য বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। এর প্রধান উপাদান হলো হলুদ, যা কারকিউমিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী উপাদানে ভরপুর। সর্দি-কাশি, জ্বর, ব্যথা উপশম এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এটি খুবই কার্যকর।
হলুদ দুধ বানানোর নিয়ম
হলুদ দুধ তৈরি করা খুবই সহজ এবং আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী এর উপকরণে কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন। নিচে একটি সাধারণ ও পুষ্টিকর হলুদ দুধ তৈরির নিয়ম দেওয়া হলো:
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- দুধ: ১ কাপ (গরুর দুধ, ভেড়ার দুধ, অথবা উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধ যেমন – বাদামের দুধ, সয়া দুধ, ওটস দুধ বা নারিকেল দুধ ব্যবহার করতে পারেন)।
- হলুদ গুঁড়ো: ১/২ থেকে ১ চা চামচ (যদি কাঁচা হলুদ ব্যবহার করেন, তাহলে ১ ইঞ্চি পরিমাণ)।
- কালো গোলমরিচ গুঁড়ো: ১/৪ চা চামচ (এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কালো গোলমরিচে থাকা পাইপারিন (piperine) হলুদের কারকিউমিন (curcumin) শোষণে ৩০ গুণ পর্যন্ত সাহায্য করে)।
- মধু বা ম্যাপেল সিরাপ: ১ চা চামচ বা স্বাদমতো (ঐচ্ছিক)।
- আদা (গ্রেট করা বা গুঁড়ো): ১/২ ইঞ্চি কাঁচা আদা বা ১/৪ চা চামচ আদা গুঁড়ো (ঐচ্ছিক, তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক)।
- দারচিনি গুঁড়ো: ১/৪ চা চামচ (ঐচ্ছিক, স্বাদের জন্য এবং এরও কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে)।
- নারিকেল তেল বা ঘি: ১/২ চা চামচ (ঐচ্ছিক, কারকিউমিন চর্বিতে দ্রবণীয় হওয়ায় এটি শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে)।
তৈরির পদ্ধতি:
১. একটি সসপ্যান বা ছোট পাত্রে দুধ নিন।
২. দুধের সাথে হলুদ গুঁড়ো, কালো গোলমরিচ গুঁড়ো, আদা (যদি ব্যবহার করেন) এবং দারচিনি গুঁড়ো (যদি ব্যবহার করেন) মেশান।
৩. সব উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে মাঝারি আঁচে চুলায় বসান।
৪. দুধ ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে দিন এবং ৫-১০ মিনিট হালকা আঁচে ফুটতে দিন। এতে মশলার নির্যাস ভালোভাবে দুধে মিশে যাবে।
৫. এরপর চুলা বন্ধ করে দিন।
৬. দুধ ছেঁকে নিন (যদি আদা বা কাঁচা হলুদ ব্যবহার করেন)।
৭. দুধ কিছুটা ঠাণ্ডা হলে মধু বা ম্যাপেল সিরাপ মিশিয়ে নিন। গরম দুধে মধু মেশালে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে পারে।
৮. যদি নারিকেল তেল বা ঘি ব্যবহার করেন, তাহলে পরিবেশনের আগে মিশিয়ে নিন।
কিছু টিপস:
- কাঁচা হলুদ ব্যবহার: তাজা কাঁচা হলুদ ব্যবহার করলে এর পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। সেক্ষেত্রে হলুদ গ্রেট করে বা থেঁতো করে দুধে মিশিয়ে নিন।
- গোল্ডেন পেস্ট: আপনি আগে থেকে হলুদ, গোলমরিচ এবং সামান্য পানি মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। প্রতিবার দুধ তৈরির সময় এই পেস্ট থেকে ১ চা চামচ ব্যবহার করতে পারেন।
- সময়: রাতে ঘুমানোর আগে হলুদ দুধ পান করলে ভালো ঘুম হয় এবং শরীরকে সারারাতের বিশ্রামের সময় রোগমুক্তির কাজে সহায়তা করে। সর্দি-কাশি বা সাধারণ অসুস্থতার সময় দিনের যেকোনো সময় পান করতে পারেন।
এই স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু পানীয়টি নিয়মিত পান করে আপনি এর বিভিন্ন উপকারিতা উপভোগ করতে পারেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন