সিজারের পর আপনার শরীর পুনরুদ্ধার করছে এবং সঠিক খাবার গ্রহণ এই প্রক্রিয়াটিকে দ্রুততর করতে সাহায্য করবে। এমন খাবার গ্রহণ করা উচিত যা সহজে হজমযোগ্য, পুষ্টিকর এবং যা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক। এখানে সিজারের পর একটি সাধারণ খাবার তালিকা দেওয়া হলো, তবে আপনার বিশেষ স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বা ডাক্তারের কোনো নির্দিষ্ট পরামর্শ থাকলে তা অবশ্যই অনুসরণ করবেন:
প্রথম কয়েক দিন (হাসপাতালে থাকার সময়):
- তরল খাবার: অপারেশনের পর প্রথম কয়েক ঘণ্টা বা দিন আপনার হজমতন্ত্রকে ধীরে ধীরে খাবারের সাথে মানিয়ে নিতে হবে। তাই, প্রথমে হালকা তরল খাবার দেওয়া হয়, যেমন -
- পরিষ্কার ঝোল (Clear soup)
- পাতলা চা বা কফি (অল্প চিনি সহ)
- ডাবের জল
- ইলেকট্রোলাইট পানীয়
- নরম খাবার: তরল খাবার হজম হলে ধীরে ধীরে নরম খাবারের দিকে যাওয়া হয়, যেমন -
- পাতলা খিচুড়ি
- সুজি
- সাগু
- নরম ভাত
- সেদ্ধ ডিমের সাদা অংশ
- মিষ্টি দই
বাসায় ফেরার পর (প্রথম কয়েক সপ্তাহ):
- সহজে হজমযোগ্য প্রোটিন: প্রোটিন শরীরের টিস্যু পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। -
- মুরগির মাংসের পাতলা ঝোল বা সেদ্ধ মাংসের কিমা
- মাছ (হালকা মসলায় রান্না করা)
- ডিম (সেদ্ধ বা পোঁচ)
- ডাল (পাতলা করে রান্না করা)
- পনির (কম ফ্যাটযুক্ত)
- শস্য ও শস্যজাত: শক্তি এবং ফাইবার সরবরাহ করে। -
- নরম ভাত
- লাল আটার রুটি বা চাপাতি
- ওটস
- সুজি
- ফল ও সবজি: ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবার সমৃদ্ধ। -
- পাকা কলা
- পেঁপে
- আপেল (সেদ্ধ বা নরম)
- মিষ্টি আলু (সেদ্ধ)
- গাজর (সেদ্ধ)
- পালং শাকের মতো নরম পাতাযুক্ত সবজি (ভালোকরে রান্না করা)
- স্বাস্থ্যকর ফ্যাট: অল্প পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শক্তি যোগায়। -
- ঘি (অল্প পরিমাণে)
- জলপাই তেল (রান্নায় বা সালাদে)
- অ্যাভোকাডো (যদি হজম হয়)
যা এড়িয়ে যাওয়া উচিত:
- তৈলাক্ত ও ভাজা খাবার: হজম করতে কঠিন এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করতে পারে।
- মসলাদার খাবার: পেটে জ্বালা বা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
- বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি: গ্যাস তৈরি করতে পারে।
- ডাল ও মটরশুঁটি (অতিরিক্ত পরিমাণে): গ্যাস তৈরি করতে পারে। ধীরে ধীরে অল্প পরিমাণে শুরু করুন।
- ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার: এগুলোতে পুষ্টি কম থাকে এবং হজম করা কঠিন হতে পারে।
- অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয়: ওজন বাড়াতে পারে এবং নিরাময় প্রক্রিয়াকে ধীর করতে পারে।
- ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল: ডিহাইড্রেশন ঘটাতে পারে এবং নিরাময় প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে।
অতিরিক্ত টিপস:
- ছোট এবং ঘন ঘন খাবার খান: একবারে বেশি খাবার না খেয়ে অল্প পরিমাণে খাবার কয়েকবার খান।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন: প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে জল পান করা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সহায়ক।
- ধীরে ধীরে নতুন খাবার যোগ করুন: আপনার শরীর কীভাবে বিভিন্ন খাবারের সাথে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে তা লক্ষ্য রাখুন এবং ধীরে ধীরে আপনার স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসে ফিরে যান।
- কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ: প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার (ফল, সবজি, লাল আটা) এবং জল পান করুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে হালকা ল্যাক্সেটিভ ব্যবহার করতে পারেন।
সিজারের পর আপনার শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী এই তালিকা পরিবর্তন হতে পারে। আপনার কোনো বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা বা খাদ্যাভ্যাস থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের বা একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন