ধূমপান ছাড়ার পর শরীরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আসে, যেগুলোকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও ধরা যেতে পারে। এগুলো মূলত নিকোটিনের অভাব এবং শরীর পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার প্রক্রিয়ার ফল। ধূমপান ছাড়ার পর কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিচে উল্লেখ করা হলো:
শারীরিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
- নিকোটিন উইথড্রয়াল (Nicotine Withdrawal): এটি সবচেয়ে পরিচিত এবং উল্লেখযোগ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এর লক্ষণগুলো ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং তীব্রতাও আলাদা হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
- তীব্র সিগারেট খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা (Craving): এটি সবচেয়ে শক্তিশালী এবং কষ্টকর অনুভূতিগুলোর মধ্যে একটি।
- বিরক্তি, অস্থিরতা ও খিটখিটে মেজাজ (Irritability, Restlessness, and Frustration): কোনো কারণ ছাড়াই মেজাজ খারাপ লাগা বা অধৈর্য্য বোধ হতে পারে।
- উদ্বেগ (Anxiety): দুশ্চিন্তা বা অস্থিরতা বেড়ে যেতে পারে।
- মনোনিবেশে অসুবিধা (Difficulty Concentrating): কোনো কাজে মনোযোগ দিতে সমস্যা হতে পারে।
- ঘুমের সমস্যা (Sleep Disturbances): অনিদ্রা বা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
- মাথাব্যথা (Headache): হালকা থেকে মাঝারি ধরনের মাথাব্যথা অনুভব হতে পারে।
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা (Fatigue and Tiredness): শরীরে দুর্বলতা ও ক্লান্তি লাগতে পারে।
- কাশি (Cough): ধূমপানের কারণে শ্বাসনালীতে জমা হওয়া কফ বের হওয়ার চেষ্টা করলে কাশি হতে পারে।
- গলা ব্যথা (Sore Throat): শ্বাসনালী পরিষ্কার হওয়ার সময় গলা ব্যথা অনুভব হতে পারে।
- নাকে পানি ঝরা (Runny Nose): শ্বাসতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ফিরে আসার কারণে এমন হতে পারে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation): হজম প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
- ক্ষুধা বৃদ্ধি ও ওজন বৃদ্ধি (Increased Appetite and Weight Gain): ধূমপান ক্ষুধা দমন করতে সাহায্য করত, তাই এটি ছাড়ার পর ক্ষুধা বেড়ে যেতে পারে এবং ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
মানসিক ও আবেগিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
- হতাশা (Depression): কিছু ধূমপায়ী ধূমপান ছাড়ার পর বিষণ্ণতা অনুভব করতে পারে।
- মেজাজের পরিবর্তন (Mood Swings): হঠাৎ করে ভালো লাগা বা খারাপ লাগার অনুভূতি হতে পারে।
- উৎসাহের অভাব (Lack of Enthusiasm): কোনো কিছুতে আগ্রহ বা motivation কমে যেতে পারে।
কতদিন স্থায়ী হতে পারে:
ধূমপান ছাড়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর তীব্রতা সাধারণত প্রথম কয়েক দিন বা সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি থাকে। শারীরিক উইথড্রয়ালের লক্ষণগুলো সাধারণত ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে কমে যায়। তবে, সিগারেটের তীব্র আকাঙ্ক্ষা (craving) কয়েক মাস বা তারও বেশি সময় ধরে থাকতে পারে। মানসিক ও আবেগিক পরিবর্তনগুলোও ধীরে ধীরে উন্নতি লাভ করে।
কিভাবে মোকাবেলা করবেন:
- ধীরে ধীরে ছাড়ার চেষ্টা না করে একেবারে ছেড়ে দিন: হঠাৎ করে ধূমপান বন্ধ করাই সাধারণত সবচেয়ে কার্যকর।
- পরিকল্পনা করুন: ধূমপান ছাড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করুন এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন।
- সমর্থন খুঁজুন: বন্ধু, পরিবার বা সাপোর্ট গ্রুপের সাহায্য নিন।
- বিকল্প খুঁজে বের করুন: যখন সিগারেট খেতে ইচ্ছা করবে তখন অন্য কিছু করুন, যেমন - পানি পান করা, ফল খাওয়া, ব্যায়াম করা বা অন্য কোনো কাজে মনোযোগ দেওয়া।
- ধূমপান করার স্থান ও পরিস্থিতি এড়িয়ে চলুন: যেখানে আগে ধূমপান করতেন সেই স্থানগুলো এড়িয়ে চলুন এবং ধূমপান করার মতো পরিস্থিতিগুলো থেকে দূরে থাকুন।
- ধৈর্য ধরুন: মনে রাখবেন, প্রথম কয়েক সপ্তাহ কঠিন হতে পারে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি সহজ হয়ে যাবে।
- প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন: যদি উইথড্রয়ালের লক্ষণগুলো খুব বেশি কষ্টকর হয়, তবে ডাক্তার আপনাকে কিছু ওষুধ বা থেরাপির মাধ্যমে সাহায্য করতে পারেন।
ধূমপান ত্যাগ করা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা বয়ে আনে। প্রথম দিকের অসুবিধাগুলো মোকাবেলা করতে পারলে আপনি একটি সুস্থ ও সুন্দর জীবন ফিরে পাবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন