সিজারের পর পা ফোলা একটি স্বাভাবিক ঘটনা, যা প্রসব পরবর্তী ইডেমা (Postpartum Edema) নামে পরিচিত। গর্ভাবস্থায় শরীরে অতিরিক্ত তরল জমা হয় এবং সিজারের সময় দেওয়া আইভি ফ্লুইডের কারণেও এটি হতে পারে। সাধারণত, এই ফোলা কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিজে থেকেই কমে যায়। তবে, কিছু উপায় অবলম্বন করে আপনি এই ফোলা কমাতে পারেন এবং আরাম পেতে পারেন:
করণীয়:
- পা উঁচু করে রাখুন: যখনই বিশ্রাম নেবেন বা ঘুমাবেন, পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে পা হার্টের level-এর উপরে রাখুন। এটি তরলকে পায়ের দিক থেকে শরীরের উপরের দিকে প্রবাহিত হতে সাহায্য করবে। দিনে কয়েকবার ২০ মিনিটের জন্য পা উঁচু করে রাখতে পারেন।
- হাঁটাচলা করুন: হালকা হাঁটাচলা রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে এবং অতিরিক্ত তরল বের করে দিতে সাহায্য করে। তবে, অতিরিক্ত exertion এড়িয়ে চলুন এবং আপনার শরীরের কথা শুনুন।
- কম্প্রেশন স্টকিং ব্যবহার করুন: ইলাস্টিক সাপোর্ট স্টকিং বা কম্প্রেশন মোজা পরলে পায়ের রক্তনালীগুলির উপর চাপ সৃষ্টি হয়, যা তরল জমা হতে বাধা দেয় এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এগুলি পরুন এবং সারাদিন রাখুন।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন: যদিও এটি counterintuitive মনে হতে পারে, তবে পর্যাপ্ত জল পান করলে শরীর ডিহাইড্রেশন এড়াতে পারে, যা শরীরকে আরও বেশি তরল ধরে রাখতে উৎসাহিত করে। জল শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতেও সাহায্য করে।
- লবণ কম খান: অতিরিক্ত লবণ খেলে শরীরে জল ধরে রাখার প্রবণতা বাড়ে, যা ফোলা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং অতিরিক্ত লবণ খাওয়া কমানো উচিত।
- পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান: পটাশিয়াম শরীরে সোডিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত তরল কমাতে সহায়ক হতে পারে। কলা, কমলালেবু, পালং শাক, এবং দইয়ের মতো খাবার পটাশিয়ামের ভালো উৎস।
- ক্যাফেইন ত্যাগ করুন: ক্যাফেইন ডিহাইড্রেশন ঘটাতে পারে, যা শরীরকে আরও বেশি তরল ধরে রাখতে সংকেত দিতে পারে। তাই, কফি ও অন্যান্য ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় কম পান করা উচিত।
- ঢিলেঢালা পোশাক পরুন: টাইট পোশাক রক্ত সঞ্চালনে বাধা দিতে পারে এবং ফোলা আরও বাড়াতে পারে। আরামদায়ক এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করুন।
- ঠান্ডা সেঁক দিন: ফোলা জায়গায় ঠান্ডা সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায় এবং ফোলা কমতে পারে।
- মালিশ করুন: হালকা হাতে ফোলা জায়গায় মালিশ করলে রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয় এবং তরল চলাচল করতে সাহায্য করে। তবে, সিজারের ক্ষত সংবেদনশীল থাকলে সাবধানে মালিশ করুন।
বর্জনীয়:
- দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা এড়িয়ে চলুন। যদি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতে বা বসতে হয়, তাহলে মাঝে মাঝে বিরতি নিন এবং পা নাড়াচাড়া করুন।
- পা ক্রস করে বসবেন না, এতে রক্ত চলাচল ব্যাহত হতে পারে।
কখন ডাক্তার দেখাবেন:
- যদি হঠাৎ করে খুব বেশি ফোলা দেখা দেয়।
- যদি এক পায়ে অন্য পায়ের তুলনায় বেশি ফোলা থাকে এবং ব্যথা হয়।
- যদি ফোলা জায়গায় লালচে ভাব, গরম লাগা বা ব্যথা থাকে।
- যদি শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা অনুভব করেন।
- যদি ফোলা এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে না কমে।
এই লক্ষণগুলি ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (Deep Vein Thrombosis - DVT) বা অন্য কোনো জটিলতার ইঙ্গিত হতে পারে, যার জন্য দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।
সিজারের পর আপনার শরীর পুনরুদ্ধার করছে, তাই নিজের যত্ন নিন এবং কোনো অস্বাভাবিকতা দেখলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন