অতিরিক্ত ঘাম কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। আপনার ঘামের কারণ ও তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডাক্তার উপযুক্ত চিকিৎসা নির্ধারণ করবেন। নিজে থেকে কোনো ঔষধ না নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
অতিরিক্ত ঘাম কমানোর জন্য সাধারণভাবে নিম্নলিখিত ঔষধ ও চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা হয়:
১. অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট (Antiperspirants):
- অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড (Aluminum Chloride): এটি প্রেসক্রিপশন বা ওভার-দ্য-কাউন্টারে (OTC) পাওয়া যায়। রাতে শুষ্ক ত্বকে লাগিয়ে সকালে ধুয়ে ফেলতে হয়। এটি ঘাম গ্রন্থির নালী বন্ধ করে ঘাম উৎপাদন কমায়। ত্বকে জ্বালা হতে পারে।
২. অ্যান্টিকোলিনার্জিক ঔষধ (Anticholinergic Medications):
- গ্লাইকোপাইরলেট (Glycopyrrolate): এটি মুখ দিয়ে খাওয়ার ঔষধ এবং ঘাম কমাতে সাহায্য করে। এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, যেমন মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ঝাপসা দৃষ্টি, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং প্রস্রাব ধরে রাখতে অসুবিধা।
- অক্সিবুটিনিন (Oxybutynin): এটি সাধারণত মূত্রাশয়ের সমস্যার জন্য ব্যবহার করা হয়, তবে অতিরিক্ত ঘাম কমাতেও এটি কার্যকর হতে পারে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো গ্লাইকোপাইরলেটের মতোই।
- প্রোপান্থেলিন ব্রোমাইড (Propantheline Bromide): এটিও একটি অ্যান্টিকোলিনার্জিক ঔষধ যা ঘাম কমাতে ব্যবহৃত হয়।
৩. বিটা ব্লকার (Beta-blockers) ও বেনজোডিয়াজেপিন (Benzodiazepines):
- উদ্বেগ বা মানসিক চাপের কারণে অতিরিক্ত ঘাম হলে এই ঔষধগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। বিটা ব্লকার হৃদস্পন্দন কমিয়ে এবং উদ্বেগের শারীরিক লক্ষণগুলো হ্রাস করে ঘাম কমাতে সাহায্য করে। বেনজোডিয়াজেপিনও উদ্বেগের উপশম করে। তবে এগুলোর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে এবং এগুলো অভ্যাসে পরিণত হতে পারে।
৪. বোটুলিনাম টক্সিন ইনজেকশন (Botulinum Toxin Injections - Botox):
- বোটক্স ইনজেকশন ঘাম গ্রন্থি সক্রিয়কারী স্নায়ু সংকেত ব্লক করে ঘাম উৎপাদন কমাতে পারে। এটি সাধারণত বগল, হাত বা পায়ের তলায় অতিরিক্ত ঘামের জন্য ব্যবহার করা হয়। এর প্রভাব কয়েক মাস স্থায়ী হয় এবং পুনরায় ইনজেকশন নিতে হয়।
৫. টপিক্যাল গ্লাইকোপাইরোনিয়াম টসিলেট (Topical Glycopyrronium Tosylate - Qbrexza):
- এটি একটি প্রেসক্রিপশন ওয়াইপ যা বগলের অতিরিক্ত ঘাম কমাতে ব্যবহৃত হয়। এর কিছু স্থানীয় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, যেমন ত্বক জ্বালা করা বা মুখ শুকিয়ে যাওয়া।
৬. অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি:
- আয়োনোফোরেসিস (Iontophoresis): এই পদ্ধতিতে ত্বকের মাধ্যমে মৃদু বৈদ্যুতিক প্রবাহ চালনা করা হয়, যা ঘাম গ্রন্থির কার্যকারিতা কমাতে সাহায্য করে। এটি সাধারণত হাত ও পায়ের ঘামের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- মাইক্রোওয়েভ থেরাপি (miraDry): এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে মাইক্রোওয়েভ শক্তি ব্যবহার করে ঘাম গ্রন্থি ধ্বংস করা হয়। এটি মূলত বগলের ঘামের জন্য প্রযোজ্য।
- সার্জারি (Surgery): গুরুতর ক্ষেত্রে, যেখানে অন্য কোনো চিকিৎসায় কাজ হয় না, সেখানে কিছু স্নায়ু কেটে দেওয়া বা ঘাম গ্রন্থি অপসারণের জন্য সার্জারি করা যেতে পারে (যেমন এন্ডোস্কোপিক থোরাসিক সিম্প্যাথেকটমি - ETS)।
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
- নিজ থেকে কোনো ঔষধ কিনবেন না বা ব্যবহার করবেন না।
- একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ (Dermatologist) বা আপনার সাধারণ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।
- ডাক্তার আপনার ঘামের কারণ, তীব্রতা এবং আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য বিবেচনা করে সঠিক ঔষধ বা চিকিৎসার পরামর্শ দেবেন।
- ঔষধের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন।
- চিকিৎসার সময় ডাক্তারের দেওয়া নির্দেশনা ভালোভাবে মেনে চলুন।
মনে রাখবেন, অতিরিক্ত ঘামের চিকিৎসা ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন