আখরোট খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা,আখরোট ও মধুর উপকারিতা

 

আখরোট একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার এবং এটি সঠিকভাবে খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। নিচে আখরোট খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

আখরোট খাওয়ার নিয়ম:

  • সরাসরি খাওয়া: আখরোটের খোসা ভেঙে সরাসরি কাঁচা খাওয়া সবচেয়ে সহজ এবং প্রচলিত নিয়ম।
  • ভেজিয়ে খাওয়া: কিছু লোক আখরোট ভিজিয়ে খেতে পছন্দ করেন। রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া যেতে পারে। মনে করা হয় যে ভিজিয়ে খেলে এর পুষ্টি উপাদান সহজে হজমযোগ্য হয় এবং ফাইটিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমে যায়, যা কিছু খনিজ শোষণে বাধা দিতে পারে।
  • খাবারের সাথে মিশিয়ে:
    • সকালের নাস্তায়: ওটমিল, ইয়োগার্ট বা সিরিয়ালের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
    • সালাদে: কুচি করে সালাদের সাথে মেশালে স্বাদ ও পুষ্টি দুটোই বাড়ে।
    • ডেজার্টে: পায়েস, হালুয়া বা অন্যান্য মিষ্টি খাবারে ব্যবহার করা যায়।
    • বেকিংয়ে: কেক, কুকিজ বা ব্রেডের মধ্যে ব্যবহার করা যায়।
    • তরকারিতে: কিছু বিশেষ রান্নায় আখরোট বাটা ব্যবহার করা হয়, যা খাবারের স্বাদ ও ঘনত্ব বৃদ্ধি করে।
  • আখরোটের তেল: আখরোটের তেল সালাদ ড্রেসিং বা হালকা রান্নার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এটি উচ্চ তাপে রান্নার জন্য উপযুক্ত নয়।
  • আখরোটের দুধ: ভেজানো আখরোট ব্লেন্ড করে এবং ছেঁকে দুধ তৈরি করা যায়, যা গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

কতটা খাওয়া উচিত:

  • প্রতিদিন এক মুঠো (প্রায় ৩০ গ্রাম বা ৭-৮টি) আখরোট খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে তা ওজন বৃদ্ধি বা হজমের সমস্যা করতে পারে।

আখরোট খাওয়ার উপকারিতা:

  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: আখরোটে প্রচুর পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (যেমন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড) থাকে, যা খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
  • মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করে: আখরোটে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে, স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে এবং বয়সজনিত মস্তিষ্কের দুর্বলতা কমাতে সহায়ক। এর আকার অনেকটা মস্তিষ্কের মতো হওয়ায় একে "ব্রেইন ফুড"ও বলা হয়।
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে আখরোটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য যৌগ কিছু নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সারের (যেমন স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার) ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: যদিও আখরোটে ক্যালোরি বেশি থাকে, তবে এর ফাইবার এবং প্রোটিন দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে, যা অতিরিক্ত খাওয়া কমাতে সহায়ক এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: আখরোট রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে।
  • হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: আখরোটে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসের মতো খনিজ উপাদান থাকে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ঘুমের উন্নতি ঘটায়: আখরোটে মেলাটোনিন নামক হরমোন থাকে, যা ঘুমের চক্র নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ভালো ঘুম হতে সহায়ক।
  • প্রদাহ কমায়: আখরোটে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়।
  • ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: আখরোটে থাকা ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে ফ্রি র‍্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং ত্বককে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।

আখরোট একটি অত্যন্ত উপকারী খাবার যা আপনার খাদ্যতালিকায় নিয়মিত যোগ করা উচিত। তবে পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই ভালো এবং কোনো বিশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন