কোন খাবার খেলে রক্ত বাড়ে

 

রক্ত বাড়াতে বা রক্তস্বল্পতা দূর করতে কিছু নির্দিষ্ট পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন, বিশেষ করে আয়রন, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১২ এবং ফোলেট। এই উপাদানগুলো সমৃদ্ধ খাবার খেলে শরীরে হিমোগ্লোবিন ও লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বাড়ে, যা রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে।

এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাবার ও তাদের কার্যকারিতা উল্লেখ করা হলো:

১. আয়রন সমৃদ্ধ খাবার:

আয়রন হিমোগ্লোবিনের একটি অপরিহার্য উপাদান। শরীর যদি পর্যাপ্ত আয়রন না পায়, তাহলে হিমোগ্লোবিন তৈরি হতে পারে না, ফলে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। আয়রনের উৎস দু'রকমের হয়: হেম আয়রন (প্রাণীজ উৎস) এবং নন-হেম আয়রন (উদ্ভিজ্জ উৎস)। হেম আয়রন শরীর সহজে শোষণ করতে পারে।

  • প্রাণীজ উৎস (হেম আয়রন):

    • কলিজা: গরুর, খাসির বা মুরগির কলিজা আয়রনের অন্যতম সেরা উৎস। এতে প্রচুর ভিটামিন বি কমপ্লেক্সও থাকে।
    • লাল মাংস: গরুর মাংস, খাসির মাংস, ভেড়ার মাংস ইত্যাদি।
    • মুরগির মাংস: বিশেষ করে গাঢ় মাংস আয়রনের ভালো উৎস।
    • মাছ: সামুদ্রিক মাছ (যেমন টুনা, স্যামন), শিং মাছ, মাগুর মাছ ইত্যাদি।
    • ডিম: ডিমের কুসুমে প্রচুর আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে।
  • উদ্ভিজ্জ উৎস (নন-হেম আয়রন):

    • সবুজ শাক-সবজি: পালং শাক, কচু শাক, পুঁই শাক, ব্রকলি, বিট পাতা, সরিষা শাক।
    • ডাল ও শিম জাতীয় খাবার: মসুর ডাল, ছোলা, মুগ ডাল, শিমের বিচি, সয়াবিন।
    • শস্য: লাল চাল, বার্লি, কুইনোয়া।
    • শুকনো ফল: কিশমিশ, খেজুর, অ্যাপ্রিকট।
    • বীজ ও বাদাম: কুমড়ার বীজ, তিল, চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট।

২. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার:

ভিটামিন সি শরীরের আয়রন শোষণে সাহায্য করে। তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের সাথে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে আয়রন শোষণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

  • লেবু ও সাইট্রাস ফল: কমলা, লেবু, জাম্বুরা, মাল্টা।
  • অন্যান্য ফল: স্ট্রবেরি, পেঁপে, আম, তরমুজ, আপেল, বেদানা (ডালিম)।
  • সবজি: টমেটো, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, কাঁচা মরিচ।

৩. ফোলেট (ভিটামিন বি৯) সমৃদ্ধ খাবার:

ফোলেট লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে।

  • সবুজ শাক-সবজি: পালং শাক, ব্রকলি, লেটুস।
  • ফল: কমলা, অ্যাভোকাডো, কলা।
  • ডাল ও শিম: ছোলা, মসুর ডাল।
  • বাদাম: চীনা বাদাম।
  • কলিজা: প্রাণীজ কলিজা।

৪. ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাবার:

ভিটামিন বি১২ লোহিত রক্তকণিকা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর অভাবেও রক্তস্বল্পতা হতে পারে।

  • প্রাণীজ উৎস: মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য।
  • উদ্ভিজ্জ উৎস: যদিও উদ্ভিজ্জ খাবারে ভিটামিন বি১২ প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া যায় না, তবে কিছু ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ সিরিয়াল ও সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়।

৫. অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাবার:

  • চুকন্দর (বিটরুট): এতে আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড দুটোই আছে, যা রক্ত বাড়াতে খুব কার্যকর।
  • ডালিম: আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার এবং ভিটামিন সি এর ভালো উৎস, যা দ্রুত রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে।
  • কলা: ভিটামিন এ, বি, সি, আয়রন ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ।

কিছু টিপস:

  • আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার সময় চা বা কফি পান করা এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলি আয়রন শোষণে বাধা দিতে পারে।
  • যাদের রক্তস্বল্পতা রয়েছে, তাদের জন্য একটি সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্যতালিকা অনুসরণ করা জরুরি।
  • যদি রক্তস্বল্পতার লক্ষণগুলো গুরুতর হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অনেক সময় শুধু খাবার দিয়ে পূরণ না হলে আয়রন সাপ্লিমেন্ট বা অন্যান্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

এই খাবারগুলো নিয়মিত খেলে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলে রক্তস্বল্পতা দূর করতে এবং শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন