অতিরিক্ত সাদা স্রাব হওয়া বা লিউকোরিয়া (Leukorrhea) বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং এর পরিণতি নির্ভর করে কারণটির ওপর। সাধারণভাবে, অল্প পরিমাণে সাদা স্রাব হওয়া স্বাভাবিক, যা যোনিপথকে পরিষ্কার ও আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। তবে, যদি স্রাবের পরিমাণ অতিরিক্ত হয়, রং বা গন্ধ পরিবর্তিত হয়, অথবা এর সাথে অন্য কোনো উপসর্গ থাকে, তবে এটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
অতিরিক্ত সাদা স্রাবের কিছু সম্ভাব্য কারণ এবং তার পরিণতি নিচে উল্লেখ করা হলো:
সাধারণ কারণ ও পরিণতি:
- হরমোনের পরিবর্তন: মাসিক চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে বা গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে সাদা স্রাবের পরিমাণ বাড়তে পারে। এটি সাধারণত ক্ষতিকর নয়, তবে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
- ওভুলেশন: ডিম্বস্ফোটনের সময় ইস্ট্রোজেন হরমোনের বৃদ্ধির কারণে স্বচ্ছ ও পিচ্ছিল স্রাবের পরিমাণ বাড়ে। এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
- মানসিক চাপ: অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণেও হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তিত হতে পারে এবং এর ফলে স্রাবের পরিমাণে পরিবর্তন আসতে পারে।
সংক্রমণজনিত কারণ ও পরিণতি:
- ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস (Bacterial Vaginosis): এটি যোনিপথের স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে হয়। এর ফলে মাছের আঁশটে গন্ধযুক্ত, ধূসর বা সাদা রঙের স্রাব হতে পারে এবং চুলকানি বা জ্বালাভাব থাকতে পারে। চিকিৎসা না করালে পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ (PID) হতে পারে, যা বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।
- ইস্ট সংক্রমণ (Yeast Infection): এটি ক্যানডিডা নামক এক প্রকার ছত্রাকের কারণে হয়। এর ফলে ঘন, সাদা, দইয়ের মতো স্রাব, তীব্র চুলকানি, লালচে ভাব এবং প্রস্রাবের সময় জ্বালাভাব হতে পারে।
- ট্রাইকোমোনিয়াসিস (Trichomoniasis): এটি একটি পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট যৌনবাহিত সংক্রমণ। এর ফলে হলুদ বা সবুজ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, চুলকানি, ব্যথা এবং প্রস্রাবের সময় অস্বস্তি হতে পারে। এটি চিকিৎসা না করালে অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
- ক্ল্যামিডিয়া ও গনোরিয়া (Chlamydia & Gonorrhea): এই দুটিও যৌনবাহিত সংক্রমণ এবং অনেক সময় এদের প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে, পরবর্তীতে অস্বাভাবিক স্রাব, তলপেটে ব্যথা এবং অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, যা বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।
অন্যান্য কারণ ও পরিণতি:
- সার্ভিসাইটিস (Cervicitis): জরায়ু মুখের প্রদাহের কারণে সাদা বা হলুদ রঙের স্রাব হতে পারে। এটি সংক্রমণের কারণে বা অন্য কোনো কারণে হতে পারে।
- পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ (PID): এটি একটি গুরুতর সংক্রমণ যা জরায়ু, ডিম্বনালী এবং ডিম্বাশয়কে আক্রান্ত করতে পারে। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে অস্বাভাবিক স্রাব, তলপেটে তীব্র ব্যথা, জ্বর এবং বমি বমি ভাব থাকতে পারে। PID চিকিৎসা না করালে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা এবং বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
- জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার: যদিও বিরল, তবে কিছু ক্ষেত্রে জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের কারণে অস্বাভাবিক স্রাব হতে পারে।
করণীয়:
যদি আপনার অতিরিক্ত সাদা স্রাব হয় এবং এর সাথে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো থাকে, তবে অবশ্যই একজন গাইনিকোলজিস্টের (স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ) পরামর্শ নেওয়া উচিত:
- স্রাবের রং পরিবর্তন (যেমন হলুদ, সবুজ, ধূসর)
- স্রাবে দুর্গন্ধ
- চুলকানি বা জ্বালাভাব
- তলপেটে ব্যথা
- প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা অস্বস্তি
- যৌন সম্পর্কের সময় ব্যথা
- জ্বর
সঠিক রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে অতিরিক্ত সাদা স্রাবের কারণে সৃষ্ট জটিলতা এড়ানো সম্ভব। তাই, কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন