বাইনারি সংখ্যা বের করার প্রধান পদ্ধতি হলো একটি দশমিক সংখ্যাকে বাইনারিতে রূপান্তর করা। নিচে এই পদ্ধতিগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
১. ভাগশেষ পদ্ধতি (Division by 2 with Remainder):
এটি দশমিক সংখ্যাকে বাইনারিতে রূপান্তর করার সবচেয়ে সহজ এবং বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি।
- ধাপ ১: দশমিক সংখ্যাটিকে ২ দিয়ে ভাগ করুন এবং ভাগফল ও ভাগশেষ নোট করুন।
- ধাপ ২: প্রাপ্ত ভাগফলটিকে আবার ২ দিয়ে ভাগ করুন এবং নতুন ভাগফল ও ভাগশেষ নোট করুন।
- ধাপ ৩: ভাগফল শূন্য না হওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করুন।
- ধাপ ৪: প্রাপ্ত ভাগশেষগুলোকে বিপরীত ক্রমে (নিচ থেকে উপরের দিকে) সাজিয়ে লিখুন। এটিই হবে আপনার দশমিক সংখ্যার বাইনারি রূপ।
উদাহরণ: দশমিক সংখ্যা ১৩ কে বাইনারিতে রূপান্তর করুন।
ভাগ প্রক্রিয়া | ভাগফল | ভাগশেষ |
১৩ ÷ ২ | ৬ | ১ |
৬ ÷ ২ | ৩ | ০ |
৩ ÷ ২ | ১ | ১ |
১ ÷ ২ | ০ | ১ |
ভাগশেষগুলোকে নিচ থেকে উপরের দিকে লিখলে পাওয়া যায়: ১১০১। সুতরাং, (১৩)₁₀ = (১১০১)₂।
২. পাওয়ার অফ টু পদ্ধতি (Powers of Two Method):
এই পদ্ধতিতে, দশমিক সংখ্যাটিকে ২ এর বিভিন্ন ঘাতের সমষ্টি হিসেবে প্রকাশ করা হয়।
- ধাপ ১: আপনার দশমিক সংখ্যার চেয়ে ছোট বা সমান ২ এর বৃহত্তম ঘাতটি খুঁজে বের করুন।
- ধাপ ২: সেই ঘাতটিকে আপনার দশমিক সংখ্যা থেকে বিয়োগ করুন এবং বাইনারি সংখ্যার সেই অবস্থানের জন্য ১ লিখুন।
- ধাপ ৩: অবশিষ্ট মানের জন্য, তার চেয়ে ছোট বা সমান ২ এর পরবর্তী বৃহত্তম ঘাতটি খুঁজে বের করুন। যদি এটি অবশিষ্ট মানের মধ্যে থাকে, তবে বাইনারি সংখ্যার সেই অবস্থানে ১ লিখুন এবং বিয়োগ করুন। যদি না থাকে, তবে সেই অবস্থানে ০ লিখুন।
- ধাপ ৪: অবশিষ্ট মান শূন্য না হওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করুন।
উদাহরণ: দশমিক সংখ্যা ১৩ কে বাইনারিতে রূপান্তর করুন।
- ২ এর ঘাতগুলো হলো: ..., ১৬, ৮, ৪, ২, ১।
- ১৩ এর সবচেয়ে ছোট বা সমান বৃহত্তম ঘাত হলো ৮ (২³)। বাইনারিতে তৃতীয় অবস্থানে ১ লিখুন (ডানদিক থেকে শুরু করে ০ তম অবস্থান)। অবশিষ্ট: ১৩ - ৮ = ৫।
- ৫ এর সবচেয়ে ছোট বা সমান বৃহত্তম ঘাত হলো ৪ (২²)। বাইনারিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ১ লিখুন। অবশিষ্ট: ৫ - ৪ = ১।
- ১ এর সবচেয়ে ছোট বা সমান বৃহত্তম ঘাত হলো ১ (২⁰)। বাইনারিতে শূন্যতম অবস্থানে ১ লিখুন। অবশিষ্ট: ১ - ১ = ০।
- যে ঘাতগুলো ব্যবহার করা হয়নি (২¹), সেগুলোর অবস্থানে ০ লিখুন।
সুতরাং, বাইনারি রূপ হলো ১১০১।
ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে বাইনারি সংখ্যা বের করার পদ্ধতি:
যদি আপনার দশমিক সংখ্যায় ভগ্নাংশ থাকে, তবে পূর্ণ অংশ এবং ভগ্নাংশ অংশের জন্য আলাদা পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে:
- পূর্ণ অংশ: উপরের দুটি পদ্ধতির যেকোনো একটি ব্যবহার করে পূর্ণ অংশকে বাইনারিতে রূপান্তর করুন।
- ভগ্নাংশ অংশ:
- ধাপ ১: ভগ্নাংশটিকে ২ দিয়ে গুণ করুন। গুণফলের পূর্ণ সংখ্যা (০ অথবা ১) নোট করুন।
- ধাপ ২: গুণফলের ভগ্নাংশ অংশটিকে আবার ২ দিয়ে গুণ করুন এবং পূর্ণ সংখ্যা নোট করুন।
- ধাপ ৩: ভগ্নাংশ অংশ শূন্য না হওয়া পর্যন্ত অথবা আপনি যত দশমিক স্থান পর্যন্ত বাইনারি চান ততবার এই প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করুন।
- ধাপ ৪: প্রাপ্ত পূর্ণ সংখ্যাগুলোকে ক্রমানুসারে লিখুন। এটিই হবে আপনার দশমিক ভগ্নাংশের বাইনারি রূপ।
উদাহরণ: দশমিক সংখ্যা ৬.২৫ কে বাইনারিতে রূপান্তর করুন।
- পূর্ণ অংশ ৬ এর বাইনারি রূপ: ১১০
- ভগ্নাংশ অংশ ০.২৫ এর বাইনারি রূপ:
- ০.২৫ × ২ = ০.৫০ (পূর্ণ সংখ্যা: ০)
- ০.৫০ × ২ = ১.০০ (পূর্ণ সংখ্যা: ১)
- ভগ্নাংশ অংশ শূন্য হয়ে গেছে।
- সুতরাং, ০.২৫ এর বাইনারি রূপ হলো ০.০১।
অতএব, ৬.২৫ এর বাইনারি রূপ হলো ১১0.01।
এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে আপনি যেকোনো দশমিক সংখ্যাকে বাইনারি সংখ্যায় রূপান্তর করতে পারবেন। কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্সের ধারণা বোঝার জন্য বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি এবং এর রূপান্তর প্রক্রিয়া জানা অপরিহার্য।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন