পেটে গ্যাস হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর মধ্যে খাদ্যাভ্যাস একটি বড় ভূমিকা পালন করে। কিছু নির্দিষ্ট খাবার হজম হতে সময় নেয় বা অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ভেঙে যাওয়ার সময় বেশি গ্যাস তৈরি করে।
এখানে কিছু সাধারণ খাবার তুলে ধরা হলো যা গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে:
১. উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার:
ফাইবার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও, কিছু নির্দিষ্ট ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার হজম প্রক্রিয়ায় বেশি গ্যাস তৈরি করে, বিশেষ করে যাদের হজমশক্তি দুর্বল।
- শিম ও ডাল জাতীয় খাবার: মটরশুঁটি, মসুর ডাল, ছোলা, রাজমা, শিম, সয়াবিন। এগুলোতে রাফিনোজ নামক এক ধরনের শর্করা থাকে যা হজম করা কঠিন।
- কিছু সবজি: ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রাসেলস স্প্রাউট, শালগম, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা পেঁয়াজ। এই সবজিগুলোতে সালফার এবং ফ্রুকটান নামক উপাদান থাকে যা গ্যাস তৈরি করে।
- গোটা শস্য: ওটস, বার্লি, গম (বিশেষ করে যাদের গ্লুটেন সংবেদনশীলতা আছে)।
২. দুগ্ধজাত পণ্য:
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা (Lactose Intolerance) থাকে, যার অর্থ তাদের শরীর দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যে থাকা ল্যাকটোজ চিনি হজম করতে পারে না। ফলে দুধ, পনির, আইসক্রিম, মাখন ইত্যাদি খেলে গ্যাস, পেট ফাঁপা এবং ডায়রিয়া হতে পারে।
৩. ফ্রুক্টোজ সমৃদ্ধ ফল:
কিছু ফলে ফ্রুক্টোজ নামক প্রাকৃতিক চিনি থাকে যা অনেকের হজম করা কঠিন হয়।
- ফল: আপেল, নাশপাতি, আম, তরমুজ, চেরি, কিশমিশ।
- ফলের রস: বেশি পরিমাণে ফলের রস পান করলে।
৪. চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার:
সোরবিটোল, ম্যানিটোল এবং জাইলিটল-এর মতো আর্টিফিশিয়াল সুইটেনার (চিনি মুক্ত ক্যান্ডি, চুইংগাম)-এর কারণে গ্যাস হতে পারে। এছাড়া, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, যেমন মিষ্টি পানীয়, কেক, পেস্ট্রি ইত্যাদিও গ্যাস তৈরি করতে পারে।
৫. কার্বনেটেড পানীয়:
সোডা, কোলা, বিয়ার এবং স্পার্কলিং ওয়াটার-এর মতো কার্বনেটেড পানীয়গুলোতে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস থাকে, যা সরাসরি পেটে গ্যাস বাড়ায়।
৬. ফ্যাট ও তৈলাক্ত খাবার:
বেশি তৈলাক্ত, ভাজাপোড়া এবং ফ্যাটযুক্ত খাবার হজম হতে বেশি সময় নেয়, ফলে গ্যাস তৈরির সম্ভাবনা বাড়ে।
৭. প্রক্রিয়াজাত খাবার:
আল্ট্রা-প্রসেসড ফুড, যেমন চিপস, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি হজম প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে এবং গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে।
৮. অন্যান্য কারণ:
- খুব দ্রুত খাওয়া: দ্রুত খাওয়ার সময় অতিরিক্ত বাতাস পেটে চলে যায়, যা গ্যাস তৈরি করে।
- খাওয়ার সময় কথা বলা: এতেও বাতাস গিলে ফেলা হয়।
- চুইংগাম চিবানো: চুইংগাম চিবানোর সময়ও বাতাস গিলে ফেলা হয়।
- কিছু রোগের কারণে: ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS), ক্রোহন'স ডিজিজ বা সিলিয়াক ডিজিজের মতো হজমজনিত সমস্যা থাকলে নির্দিষ্ট কিছু খাবারে গ্যাস হতে পারে।
- অতিরিক্ত মসলাদার খাবার: বেশি ঝাল বা মসলাদার খাবার খেলে গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়তে পারে।
যদি আপনার প্রায়শই গ্যাসের সমস্যা হয়, তবে কোন খাবারগুলো আপনার জন্য সমস্যা তৈরি করছে তা বোঝার জন্য একটি খাদ্য তালিকা তৈরি করে কোন খাবার খাওয়ার পর গ্যাস হচ্ছে তা নোট করতে পারেন। প্রয়োজনে একজন পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন