অতিরিক্ত ঘাম (Hyperhidrosis) নিজে কোনো রোগ না হলেও, এটি কিছু রোগের লক্ষণ হতে পারে। অতিরিক্ত ঘাম দুই ধরনের হতে পারে:
- প্রাইমারি হাইপারহাইড্রোসিস (Primary Hyperhidrosis): এর কোনো সুস্পষ্ট কারণ জানা যায় না। এটি সাধারণত হাত, পা, বগল বা মুখের মতো নির্দিষ্ট কিছু অংশে হয়ে থাকে।
- সেকেন্ডারি হাইপারহাইড্রোসিস (Secondary Hyperhidrosis): এটি অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে হয়ে থাকে।
যদি আপনার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘাম হয়, বিশেষ করে যদি এর সাথে অন্য কোনো উপসর্গ থাকে, তবে তা নিম্নলিখিত রোগগুলোর লক্ষণ হতে পারে:
হরমোন জনিত সমস্যা:
- হাইপারথাইরয়েডিজম (Hyperthyroidism): থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত হরমোন উৎপাদন করলে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। এর সাথে বুক ধড়ফড়, ওজন হ্রাস, অস্থিরতা ইত্যাদি লক্ষণও থাকতে পারে।
- ডায়াবেটিস (Diabetes): রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। এছাড়াও, ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ুর ক্ষতি হলে ঘামের পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে।
- মেনোপজ (Menopause): মহিলাদের মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হট ফ্লাশ এবং অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
- অ্যাক্রোমেগালি (Acromegaly): পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত গ্রোথ হরমোন নিঃসৃত হলে এই রোগ হয় এবং এর ফলে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
সংক্রমণ:
- যক্ষ্মা (Tuberculosis): রাতে অতিরিক্ত ঘাম যক্ষ্মার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। এর সাথে জ্বর, কাশি এবং ওজন হ্রাসও থাকতে পারে।
- ব্যাকটেরিয়াল এন্ডোকার্ডাইটিস (Bacterial Endocarditis): হৃদপিণ্ডের ভেতরের স্তরের সংক্রমণেও অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
- অন্যান্য গুরুতর সংক্রমণও অতিরিক্ত ঘামের কারণ হতে পারে।
ক্যান্সার:
- লিম্ফোমা (Lymphoma) ও লিউকেমিয়া (Leukemia): এই ধরনের ক্যান্সারে রাতে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া একটি সাধারণ লক্ষণ। এর সাথে ওজন হ্রাস, ক্লান্তি এবং লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়াও থাকতে পারে।
- কার্সিনয়েড টিউমার (Carcinoid Tumors): এই টিউমারগুলো কিছু হরমোন নিঃসরণ করে যার ফলে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
- কিছু অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির টিউমারও অতিরিক্ত ঘামের কারণ হতে পারে।
স্নায়বিক সমস্যা:
- পারকিনসন'স রোগ (Parkinson's Disease): এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
- স্ট্রোক (Stroke): স্ট্রোকের পরেও কিছু রোগীর অতিরিক্ত ঘাম দেখা দিতে পারে।
- অটোনোমিক ডিসফাংশন (Autonomic Dysfunction): স্নায়ুতন্ত্রের এই সমস্যা ঘাম নিয়ন্ত্রণের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে।
অন্যান্য কারণ:
- উদ্বেগ ও মানসিক চাপ (Anxiety and Stress): মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণে হঠাৎ করে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
- কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, ব্যথানাশক এবং ডায়াবেটিসের ঔষধের কারণে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
- অ্যালকোহল বা মাদক withdrawal: এগুলোর withdrawal এর সময় অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
- হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack): বুকে ব্যথার সাথে অতিরিক্ত ঠান্ডা ঘাম হওয়া হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে এবং এটি একটি জরুরি অবস্থা।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন:
যদি আপনার অতিরিক্ত ঘাম হয় এবং এর সাথে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো থাকে তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
- রাতে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
- অকারণ ওজন হ্রাস
- জ্বর
- বুক ধড়ফড়
- অতিরিক্ত তৃষ্ণা ও ঘন ঘন প্রস্রাব
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা
- অন্যান্য অস্বাভাবিক লক্ষণ
আপনার ডাক্তার আপনার লক্ষণ, চিকিৎসা ইতিহাস এবং প্রয়োজনে কিছু পরীক্ষা করে অতিরিক্ত ঘামের কারণ নির্ণয় করতে পারবেন এবং সঠিক চিকিৎসা প্রদান করতে পারবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন