মেয়েদের হরমোনের সমস্যা হলে কি হয়


মেয়েদের হরমোনের সমস্যা হলে কি হয়


মেয়েদের হরমোনের সমস্যা হলে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে প্রভাবিত করে। কোন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা হয়েছে তার উপর নির্ভর করে লক্ষণগুলো ভিন্ন হতে পারে। নিচে কিছু সাধারণ লক্ষণ এবং হরমোনজনিত সমস্যার প্রকারভেদ তুলে ধরা হলো:

 মেয়েদের হরমোনের সমস্যা হলে কি হয়

**সাধারণ লক্ষণসমূহ:**


* **মাসিক চক্রের পরিবর্তন:** অনিয়মিত মাসিক (খুব বেশি বা খুব কম রক্তপাত), মাসিক মিস হওয়া, মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা, অথবা চক্রের মধ্যে স্পটিং (কম রক্তপাত)। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) এর একটি প্রধান লক্ষণ এটি।

* **ওজন পরিবর্তন:** অব্যক্ত ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস, বিশেষ করে পেটের চারপাশে মেদ জমা।

* **মেজাজের পরিবর্তন:** হঠাৎ মেজাজ পরিবর্তন, খিটখিটে ভাব, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, বা বিরক্তি।

* **ত্বকের সমস্যা:** ব্রণ, শুষ্ক ত্বক, ত্বকের গঠন বা রঙের পরিবর্তন, এবং অস্বাভাবিক জায়গায় লোম গজানো (হিরসুটিজম)।

* **চুলের সমস্যা:** অতিরিক্ত চুল পড়া বা চুল পাতলা হয়ে যাওয়া, অথবা শরীরের বিভিন্ন অংশে অবাঞ্ছিত লোম বৃদ্ধি।

* **ক্লান্তি:** পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রাম সত্ত্বেও ক্রমাগত ক্লান্তি বা শক্তির অভাব।

* **ঘুমের ব্যাঘাত:** ইনসোমনিয়া (ঘুমাতে অসুবিধা), রাতে ঘন ঘন ঘুম ভেঙে যাওয়া বা অতিরিক্ত ঘুম।

* **যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া (লিবিডো হ্রাস):** যৌন কার্যকলাপে আগ্রহ কমে যাওয়া।

* **গরম ঝলকানি (Hot Flashes) এবং রাতের ঘাম:** মেনোপজের সময় ইস্ট্রোজেনের মাত্রা হ্রাসের কারণে এটি খুব সাধারণ লক্ষণ।

* **হজমের সমস্যা:** পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বা ডায়রিয়া।

* **বন্ধ্যাত্ব:** গর্ভধারণে অসুবিধা হওয়া।

* **স্তনের পরিবর্তন:** স্তনে ব্যথা বা স্তনের টিস্যুর পরিবর্তন।

* **অন্যান্য লক্ষণ:** জয়েন্টে ব্যথা, মাথা ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হ্রাস (যেমন মনোযোগ দিতে অসুবিধা, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা)।


**সাধারণ কিছু হরমোনজনিত সমস্যা:**


* **পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS):** এটি মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত হরমোনজনিত সমস্যা। এর ফলে অনিয়মিত মাসিক, ব্রণ, অতিরিক্ত লোম, ওজন বৃদ্ধি এবং বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।

* **থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা:**

    * **হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি):** ওজন বৃদ্ধি, দুর্বলতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, চুল পড়া, শুষ্ক ত্বক, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, পা ফোলা ইত্যাদি দেখা যায়। পুরুষদের তুলনায় নারীদের এটি ১০ গুণ বেশি হয়।

    * **হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের বৃদ্ধি):** বুক ধড়ফড়, অস্থিরতা, ওজন হ্রাস, ডায়রিয়া, চোখ বের হয়ে আসা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। উভয় ক্ষেত্রেই মাসিক অনিয়মিত হতে পারে এবং গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে।

* **মেনোপজ:** এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যেখানে ঋতুস্রাব সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের ঘাটতির কারণে গরম ঝলকানি, যোনিপথের শুষ্কতা, অনিদ্রা, মেজাজ পরিবর্তন, ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।

* **হাইপারপ্রোল্যাকটিনেমিয়া:** প্রোল্যাকটিন হরমোন বেড়ে যাওয়ার কারণে স্তন থেকে দুধ নিঃসৃত হওয়া, মাসিক বন্ধ বা অনিয়মিত হওয়া এবং গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে। এটি মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থির টিউমার বা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে হতে পারে।

* **অ্যাড্রিনাল অপ্রতুলতা:** অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি পর্যাপ্ত কর্টিসল তৈরি করতে না পারলে ক্লান্তি, নিম্ন রক্তচাপ এবং ওজন হ্রাস হতে পারে।

* **কুশিং সিনড্রোম:** অতিরিক্ত স্টেরয়েড হরমোনের কারণে শরীর মুটিয়ে যাওয়া, চামড়া পাতলা হওয়া, ফাটা দাগ, মাংসপেশি দুর্বলতা এবং হাড় ক্ষয় দেখা যায়।


**কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?**


যদি উপরের লক্ষণগুলোর মধ্যে একাধিক লক্ষণ একসাথে দেখা যায় এবং তা দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলে, তাহলে একজন হরমোন বিশেষজ্ঞ বা গাইনোকোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করা জরুরি। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার মাধ্যমে হরমোনজনিত সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন