মেয়েদের ঋতুচক্র



মেয়েদের ঋতুচক্র


মেয়েদের **ঋতুচক্র** বা **মাসিক** হলো নারীদেহের একটি স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যা প্রজননের সাথে সম্পর্কিত। এটি সাধারণত **বয়ঃসন্ধিকাল** (প্রায় ১১-১৪ বছর বয়স) থেকে শুরু হয় এবং **মেনোপজ** (সাধারণত ৪৫-৫৫ বছর বয়স) পর্যন্ত চলতে থাকে। প্রতি মাসে এই চক্রটি ঘটে এবং এটি শরীরকে সম্ভাব্য **গর্ভাবস্থার** জন্য প্রস্তুত করে।

 মেয়েদের ঋতুচক্র

---


## ঋতুচক্র কী?


ঋতুচক্র হলো নারীদেহের হরমোনের পরিবর্তনের একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যা জরায়ু এবং ডিম্বাশয়কে গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুত করে। এই চক্রের একটি অংশ হলো ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড, যেখানে জরায়ুর ভেতরের আস্তরণ (এন্ডোমেট্রিয়াম) রক্ত, টিস্যু এবং শ্লেষ্মার আকারে যোনি দিয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে আসে।


---


## ঋতুচক্রের সময়কাল


সাধারণত একটি ঋতুচক্র **২৮ দিন** স্থায়ী হয়, তবে **২১ থেকে ৩৫ দিনের** মধ্যে যেকোনো সময়কে স্বাভাবিক ধরা হয়। ঋতুস্রাব বা রক্তপাত সাধারণত **৩ থেকে ৭ দিন** পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই সময়কাল ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।


---


## ঋতুচক্রের বিভিন্ন পর্যায়


ঋতুচক্রকে মূলত চারটি প্রধান পর্যায়ে ভাগ করা যায়:


### ১. ঋতুস্রাব পর্যায় (Menstrual Phase)

এটি ঋতুচক্রের প্রথম পর্যায় এবং এটি **রক্তপাতের** মাধ্যমে শুরু হয়। এই সময় জরায়ুর আস্তরণ যা গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল, সেটি ভেঙে যায় এবং রক্ত, শ্লেষ্মা ও টিস্যু হিসেবে যোনি দিয়ে নির্গত হয়। হরমোন (ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন) এর মাত্রা এই সময় কম থাকে।


### ২. ফলিকুলার পর্যায় (Follicular Phase)

এই পর্যায়ে ডিম্বাশয়ে **ডিম্বাণু পরিপক্ক** হতে শুরু করে। ব্রেন থেকে ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন (FSH) নিঃসৃত হয়, যা ডিম্বাশয়কে ছোট ছোট ফলিকল তৈরি করতে উৎসাহিত করে। এই ফলিকলগুলির মধ্যে একটিতে ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়। এই পর্যায়ে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়তে থাকে, যা জরায়ুর আস্তরণকে আবার পুরু হতে সাহায্য করে যাতে সম্ভাব্য ভ্রূণ তৈরি হলে সেটি জরায়ুতে স্থাপন হতে পারে।


### ৩. ডিম্বস্ফোটন পর্যায় (Ovulation Phase)

এই পর্যায়ে ডিম্বাশয় থেকে **পরিপক্ক ডিম্বাণু** মুক্ত হয় এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবের দিকে চলে যায়। ইস্ট্রোজেনের মাত্রা সর্বোচ্চ হলে লুটিয়েনাইজিং হরমোন (LH) এর মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যায়, যা ডিম্বস্ফোটনকে ট্রিগার করে। ডিম্বস্ফোটন সাধারণত ঋতুচক্রের মাঝের দিকে (২৮ দিনের চক্রে প্রায় ১৪তম দিনে) ঘটে। এই সময়টাই গর্ভধারণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।


### ৪. লুটিয়াল পর্যায় (Luteal Phase)

ডিম্বস্ফোটনের পর, ডিম্বাশয়ের ফলিকলটি **করপাস লুটিয়াম** এ রূপান্তরিত হয় এবং প্রোজেস্টেরন হরমোন নিঃসরণ করতে শুরু করে। প্রোজেস্টেরন জরায়ুর আস্তরণকে আরও ঘন এবং পুষ্টিকর করে তোলে, যাতে একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু সহজেই স্থাপন হতে পারে। যদি ডিম্বাণু নিষিক্ত না হয়, তাহলে করপাস লুটিয়াম ভেঙে যায়, প্রোজেস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যায় এবং জরায়ুর আস্তরণ ভেঙে গিয়ে আবার ঋতুস্রাব শুরু হয়।


---


## ঋতুস্রাবের সময় সাধারণ লক্ষণ


ঋতুস্রাবের আগে ও সময় বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যেতে পারে, যেমন:

* **পেটে ব্যথা বা ক্র্যাম্প**

* **পিঠ ব্যথা**

* **মাথাব্যথা**

* **বমি বমি ভাব**

* **ক্লান্তি**

* **মেজাজের পরিবর্তন (যেমন বিরক্তি বা বিষণ্ণতা)**

* **স্তনে ব্যথা বা ফোলাভাব**

* **ফুলাভাব**

* **কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া**


---


## গুরুত্বপূর্ণ বিষয়


* **পরিচ্ছন্নতা:** ঋতুস্রাবের সময় স্যানিটারি প্যাড, ট্যাম্পন, পিরিয়ড কাপ বা পিরিয়ড প্যান্টি ব্যবহার করে পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি। নিয়মিত প্যাড পরিবর্তন করা উচিত।

* **স্বাভাবিক প্রক্রিয়া:** ঋতুস্রাব কোনো রোগ বা অভিশাপ নয়। এটি মেয়েদের দেহের একটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই সময় খেলাধুলাসহ যেকোনো স্বাভাবিক কাজকর্ম করা যায়।

* **অনিয়মিত ঋতুচক্র:** যদি ঋতুচক্র অস্বাভাবিকভাবে অনিয়মিত হয়, অনেক বেশি রক্তপাত হয় বা প্রচণ্ড ব্যথা হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


ঋতুচক্র সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা মেয়েদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন