মেয়েদের যোনিতে গন্ধ হয় কেন


মেয়েদের যোনিতে গন্ধ হয় কেন


মেয়েদের যোনিতে গন্ধ হওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়, তবে এর তীব্রতা বা ধরন ভিন্ন হতে পারে। কিছু নির্দিষ্ট কারণে এই গন্ধ পরিবর্তিত হতে পারে বা অস্বাভাবিক রূপ নিতে পারে।

 মেয়েদের যোনিতে গন্ধ হয় কেন

### স্বাভাবিক গন্ধের কারণ:


* **pH ভারসাম্য:** যোনিতে ল্যাকটোব্যাসিলি নামক উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে যা একটি অ্যাসিডিক পরিবেশ বজায় রাখে (pH 3.8 থেকে 4.5)। এই ভারসাম্য যোনিকে সুস্থ রাখে এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। এই সুস্থ ব্যাকটেরিয়া ফ্লোরা (Flora) স্বাভাবিকভাবেই হালকা, টক বা টক দইয়ের মতো গন্ধ তৈরি করে।

* **ঘাম:** শরীরের অন্যান্য অংশের মতো, যোনি অঞ্চলেও ঘামের গ্রন্থি থাকে। ব্যায়াম বা অতিরিক্ত ঘামের কারণে গন্ধ সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।

* **মাসিক (Menstruation):** মাসিকের সময় রক্তের কারণে যোনির গন্ধ কিছুটা ধাতব বা লোহার মতো হতে পারে।

* **যৌন মিলন:** যৌন মিলনের পর বীর্য যোনির pH-এর সঙ্গে মিশে গেলে গন্ধ সাময়িকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে।


### অস্বাভাবিক বা তীব্র গন্ধের কারণ:


যদি গন্ধটি তীব্র, বাজে বা মাছের মতো হয় এবং এর সঙ্গে অন্য কোনো উপসর্গ থাকে, তবে তা কোনো সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এমন কিছু সাধারণ কারণ নিচে দেওয়া হলো:


* **ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস (Bacterial Vaginosis - BV):** এটি যোনিতে সবচেয়ে সাধারণ সংক্রমণ। এতে যোনির স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর ফলে মাছের মতো দুর্গন্ধ এবং পাতলা, ধূসর বা সাদা স্রাব হতে পারে। যৌন মিলনের পর এই গন্ধ আরও তীব্র হতে পারে।

* **ট্রাইকোমোনিয়াসিস (Trichomoniasis):** এটি একটি যৌনবাহিত রোগ (STI)। এর ফলে প্রায়শই তীব্র, মাছের মতো বা পচা গন্ধ হয়, এবং এর সঙ্গে সবুজ বা হলুদ রঙের ফেনা ফেনা স্রাব, জ্বালাপোড়া এবং চুলকানি হতে পারে।

* **ইস্ট ইনফেকশন (Yeast Infection):** ইস্ট ইনফেকশনের ফলে সাধারণত মিষ্টি, রুটি বা বিয়ারের মতো গন্ধ হতে পারে। তবে, প্রধান উপসর্গ হলো তীব্র চুলকানি, জ্বালাপোড়া এবং দই বা ছানার মতো ঘন, সাদা স্রাব।

* **অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস:** অপরিচ্ছন্নতা, খুব টাইট বা সিনথেটিক অন্তর্বাস পরা, অথবা দীর্ঘ সময় ধরে ভেজা অন্তর্বাস পরে থাকলে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পেতে পারে, যা দুর্গন্ধের কারণ হয়।

* **ভুলে যাওয়া ট্যাম্পন:** যদি কোনো ট্যাম্পন দীর্ঘ সময় ধরে যোনিতে থেকে যায়, তবে তা পচা মাংসের মতো তীব্র দুর্গন্ধ তৈরি করতে পারে। এটি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

* **খাদ্যাভ্যাস:** কিছু গবেষণায় দেখা যায় যে, পেঁয়াজ, রসুন বা নির্দিষ্ট কিছু মশলাযুক্ত খাবার খেলে যোনির গন্ধে সামান্য পরিবর্তন আসতে পারে।

* **হরমোনের পরিবর্তন:** গর্ভাবস্থা, মেনোপজ বা মাসিক চক্রের পরিবর্তনের কারণে হরমোনের তারতম্য হয়, যা যোনি গন্ধকেও প্রভাবিত করতে পারে।


### কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?


যদি যোনির গন্ধ অস্বাভাবিক, তীব্র বা অপ্রীতিকর হয় এবং এর সঙ্গে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো থাকে, তাহলে দ্রুত একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত:


* ঘন, অস্বাভাবিক রঙের (ধূসর, সবুজ, হলুদ) স্রাব

* তীব্র চুলকানি বা জ্বালাপোড়া

* প্রস্রাবের সময় ব্যথা

* যৌন মিলনের সময় ব্যথা

* যৌনাঙ্গে লালচে ভাব বা ফোলা


**মনে রাখবেন, যোনির ভেতরের অংশ পরিষ্কার করার জন্য সাবান বা সুগন্ধিযুক্ত পণ্য ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এতে যোনির স্বাভাবিক pH ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। হালকা গরম জল দিয়ে বাইরের অংশ (ভালভা) পরিষ্কার রাখাই যথেষ্ট।**

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন