অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায়গুলো মূলত ঘন ঘন স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায়গুলোর মতোই। এখানে সেই বিষয়গুলোর উপর আরও জোর দেওয়া হলো এবং কিছু অতিরিক্ত দিক বিবেচনা করা হলো:
জীবনযাত্রায় আরও কঠোর পরিবর্তন:
- অত্যন্ত কঠোর ঘুমের রুটিন: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠা বাধ্যতামূলকভাবে পালন করুন, এমনকি ছুটির দিনেও। ঘুমের অভাব হরমোনের ভারসাম্য আরও নষ্ট করতে পারে।
- ঘুমের পূর্বে রিলাক্সেশন টেকনিক: ঘুমাতে যাওয়ার আগে হালকা গরম জলে স্নান, মেডিটেশন, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা শান্ত প্রকৃতির বই পড়ার অভ্যাস করুন। এটি মনকে শান্ত করে এবং উত্তেজনা কমায়।
- খাদ্য নিয়ন্ত্রণে আরও মনোযোগ: রাতে একেবারে হালকা খাবার গ্রহণ করুন এবং মশলাদার, তৈলাক্ত ও চিনিযুক্ত খাবার সম্পূর্ণরূপে বর্জন করুন। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি খান।
- নিয়মিত ও পরিমিত ব্যায়াম: প্রতিদিন একই সময়ে হালকা থেকে মাঝারি ব্যায়াম করুন। অতিরিক্ত বা অনিয়মিত ব্যায়াম হরমোনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ঘুমানোর অন্তত ৪ ঘণ্টা আগে ব্যায়াম শেষ করুন।
- তরল গ্রহণের সময়সূচী: দিনের বেলায় পর্যাপ্ত জল পান করুন, তবে সন্ধ্যা থেকে তরল গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিন। রাতে ঘুমানোর অন্তত ২ ঘণ্টা আগে আর জল পান করবেন না।
মানসিক ও আবেগিক নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করা:
- যৌন উদ্দীপক বিষয় থেকে সম্পূর্ণ দূরত্ব: পর্নোগ্রাফি, উত্তেজক সিনেমা, বই বা আলোচনা থেকে নিজেকে কঠোরভাবে দূরে রাখুন। ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার সীমিত করুন, যেখানে এ ধরনের বিষয়বস্তু আসতে পারে।
- চিন্তা নিয়ন্ত্রণে উন্নত কৌশল: যখনই যৌন চিন্তা বা উত্তেজনা অনুভব করবেন, তাৎক্ষণিকভাবে অন্য কোনো কাজে বা চিন্তায় মনকে ব্যস্ত করে ফেলুন। গান শোনা, বই পড়া, ছবি আঁকা বা অন্য কোনো শখের দিকে মনোযোগ দিন। প্রয়োজন হলে ডায়েরি লিখুন বা কারো সাথে কথা বলুন।
- মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা: যদি মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা থাকে, তবে একজন মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের (মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা থেরাপিস্ট) সাহায্য নিন। তারা আপনাকে কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT) বা অন্য কোনো থেরাপির মাধ্যমে চিন্তা ও আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারেন।
- ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি: নিজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রাখুন এবং ধৈর্য ধরুন। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা সমস্যা আরও বাড়াতে পারে।
আচরণগত পরিবর্তনকে অভ্যাসে পরিণত করা:
- প্রতি রাতে মূত্রাশয় খালি করা: এটি একটি নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করুন।
- ঘুমের ভঙ্গি পরিবর্তন: চিৎ হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং পেটের উপর চাপ পড়ে এমন ভঙ্গি পরিহার করুন। প্রয়োজনে বালিশ ব্যবহার করে ঘুমের ভঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করুন।
- আরামদায়ক ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধানের অভ্যাস: রাতে সিনথেটিক বা টাইট পোশাক পরিহার করুন।
চিকিৎসা ও পেশাদার পরামর্শ গ্রহণ:
- অবশ্যই ইউরোলজিস্টের পরামর্শ নিন: যদি অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ আপনার জীবনকে অসহ্য করে তোলে এবং আপনি কোনো উন্নতি না দেখেন, তবে একজন অভিজ্ঞ ইউরোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করা জরুরি। তিনি শারীরিক কোনো অন্তর্নিহিত কারণ আছে কিনা তা পরীক্ষা করবেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বা পরামর্শ দেবেন।
- মনোবিজ্ঞানী বা থেরাপিস্টের সাহায্য নিন: মানসিক কারণ এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা নিতে পারে। একজন মনোবিজ্ঞানী বা থেরাপিস্ট আপনার চিন্তাভাবনা, আবেগ এবং আচরণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারেন।
- কোনো প্রকার অপচিকিৎসা বা কুসংস্কারে বিশ্বাস করবেন না: ভুল তথ্য বা অপচিকিৎসার অনুসরণ না করে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির উপর আস্থা রাখুন।
অতিরিক্ত টিপস:
- লক্ষ্য নির্ধারণ: স্বপ্নদোষের ফ্রিকোয়েন্সি কমানোর জন্য একটি বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন।
- অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ: একটি ডায়েরি বা নোটবুকে স্বপ্নদোষের ফ্রিকোয়েন্সি এবং আপনার নেওয়া পদক্ষেপগুলো লিখে রাখুন। এটি আপনাকে আপনার অগ্রগতি ট্র্যাক করতে সাহায্য করবে।
- নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন: এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, তাই নিজের প্রতি কঠোর হবেন না। ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করুন।
যদি এই সমস্যাটি আপনার জীবনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে, তবে দ্বিধা না করে একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাহায্য নিন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন