শুকনো থাইরয়েড কমানোর উপায়,ঘরোয়া পদ্ধতিতে থাইরয়েড কমানোর উপায়

 


বর্তমান প্রেক্ষাপটে (মে ১৬, ২০২৫, ঢাকা) ঘরোয়া পদ্ধতিতে থাইরয়েড (হাইপারথাইরয়েডিজম) কমানোর উপায়গুলি নিয়ে আলোচনা করার সময় আবারও সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি মনে রাখতে হবে যে থাইরয়েডের সমস্যা একটি জটিল চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় এবং এর জন্য অবশ্যই একজন এন্ডোক্রিনোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ঘরোয়া পদ্ধতিগুলি কেবলমাত্র সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে, কিন্তু ডাক্তারের দেওয়া ঔষধ বা চিকিৎসার বিকল্প নয়।

আগের উত্তরগুলোতে ঔষধ ছাড়া থাইরয়েড কমানোর যে উপায়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোই মূলত ঘরোয়া পদ্ধতির আওতায় পড়ে। এই সময়ে নতুন কোনো বৈপ্লবিক ঘরোয়া পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি যা থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত উৎপাদনকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

সুতরাং, ঘরোয়া পদ্ধতিতে থাইরয়েড কমানোর জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর মনোযোগ দেওয়া যেতে পারে, তবে আবারও জোর দেওয়া হচ্ছে - ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়:

খাদ্য পরিবর্তন:

  • আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার পরিহার: আয়োডিন থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হাইপারথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আয়োডিন গ্রহণ ক্ষতিকর হতে পারে। তাই, আয়োডিনযুক্ত লবণ, সামুদ্রিক শৈবাল (যেমন নোরি, কেল্প), সামুদ্রিক মাছ (যেমন টুনা, কড) এবং আয়োডিনযুক্ত ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
  • ক্রুসিফেরাস সবজি গ্রহণ: বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, শালগম, সরিষার শাক ইত্যাদিতে কিছু উপাদান থাকে যা থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে বাধা দিতে পারে। তবে, এগুলো পরিমিত পরিমাণে এবং রান্না করে খাওয়া উচিত। কাঁচা অবস্থায় বেশি পরিমাণে খেলে হরমোনের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার: ফল, সবজি এবং ভেষজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  • গ্লুটেনমুক্ত খাবার: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে অটোইমিউন থাইরয়েড রোগে (যেমন Graves' disease) আক্রান্ত কিছু ব্যক্তির জন্য গ্লুটেনমুক্ত খাবার উপকারী হতে পারে। তবে, এটি সবার জন্য প্রযোজ্য নয় এবং ডাক্তারের পরামর্শে এটি অনুসরণ করা উচিত।

প্রাকৃতিক সাপ্লিমেন্ট (অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে):

  • লেমন বাম (Lemon Balm): এটি থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (TSH) রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়ে থাইরয়েড গ্রন্থির অতিরিক্ত কার্যকলাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। লেমন বাম চা পান করা যেতে পারে।
  • বাগ্লউইড (Bugleweed): ঐতিহ্যগতভাবে হাইপারথাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে মনে করা হয়। তবে, এর ব্যবহার সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন এবং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এটি ব্যবহার করা উচিত নয়।
  • সেলেনিয়াম: থাইরয়েড হরমোনের সঠিক কার্যকারিতা এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। Graves' disease-এর কিছু লক্ষণ কমাতে সহায়ক হতে পারে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করা উচিত নয়।

জীবনধারা পরিবর্তন:

  • মানসিক চাপ কমানো: স্ট্রেস থাইরয়েডের লক্ষণগুলিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। যোগা, মেডিটেশন, শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
  • পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত হালকা ব্যায়াম: হালকা ব্যায়াম সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। তবে, অতিরিক্ত কঠোর ব্যায়াম এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
  • ধূমপান পরিহার: ধূমপান থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং লক্ষণগুলিকে আরও খারাপ করতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • ঘরোয়া পদ্ধতি কখনোই ডাক্তারের দেওয়া ঔষধ বা চিকিৎসার বিকল্প নয়।
  • নিজের ইচ্ছামতো কোনো খাদ্য পরিবর্তন বা সাপ্লিমেন্ট শুরু করার আগে অবশ্যই একজন এন্ডোক্রিনোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করুন।
  • নিয়মিত থাইরয়েড ফাংশন পরীক্ষা করানো এবং ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহারে বলা যায়, ঘরোয়া পদ্ধতিগুলি হাইপারথাইরয়েডিজমের লক্ষণগুলি কিছুটা উপশম করতে সহায়ক হতে পারে, তবে এটি সম্পূর্ণরূপে নিরাময়ের জন্য যথেষ্ট নয়। সঠিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অপরিহার্য।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন