তেতুলের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা

 



তেঁতুলের বীজ, যা সাধারণত ফেলে দেওয়া হয়, তা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ এবং ভেষজ গুণ সম্পন্ন। এটি ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায় এবং কিছু শিল্প ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। তবে, এর ব্যবহার নিয়ে কিছু সতর্কতাও রয়েছে।

তেঁতুলের বীজের উপকারিতা:

তেঁতুলের বীজে ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, অ্যামিনো অ্যাসিড, প্রোটিন, ফ্যাট এবং ফাইবার থাকে। এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।

  1. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: এতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  2. হজমের উন্নতি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণ: তেঁতুলের বীজে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক। এটি বদহজম নিরাময় এবং পিত্ত উৎপাদন বৃদ্ধিতেও কার্যকর।
  3. হার্টের স্বাস্থ্য: এতে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েড খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়। উচ্চ পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
  4. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: তেঁতুলের বীজে থাকা এক ধরনের এনজাইম (alpha-amylase) রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে এটি রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে পারে।
  5. ক্যান্সার প্রতিরোধ: তেঁতুলের বীজে থাকা উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার এবং কিডনি ফেইলিওর রোধ করতে সাহায্য করে বলে দাবি করা হয়।
  6. ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য: এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে এবং চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় উপকারী।
  7. শারীরিক শক্তি ও যৌন স্বাস্থ্য: ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায় তেঁতুলের বীজ সাধারণ বলকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি শারীরিক দুর্বলতা দূর করে, দ্রুত বীর্যপাত রোধ করে, যৌন শক্তি এবং বীর্য উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ায় বলে দাবি করা হয়। অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ বন্ধ করতেও এটি সহায়ক।
  8. দাঁতের স্বাস্থ্য: বলা হয়ে থাকে, তেঁতুলের বীজের গুঁড়ো মাড়ি এবং দাঁতে ঘষলে উপকার পাওয়া যায়, বিশেষ করে ধূমপায়ীদের দাঁতে জমে থাকা টার্টার এবং প্লেক সরাতে এটি সহায়ক হতে পারে।
  9. ক্ষত নিরাময়: তেঁতুলের বীজ অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি উপাদান ধারণ করে, যা শরীরের যেকোনো প্রদাহ কমাতে এবং ক্ষত সারাতে সাহায্য করতে পারে।
  10. লিভার সুরক্ষিত রাখা: এটি লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতেও সহায়ক।
  11. অন্যান্য ব্যবহার: মশার কয়েল এবং ইউনানি, আয়ুর্বেদ, হোমিও ও অ্যালোপ্যাথিক ঔষধ তৈরিতে তেঁতুলের বীজের ব্যবহার রয়েছে। শুষ্ক চোখের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ড্রপ তৈরিতেও এটি ব্যবহৃত হয়।

তেঁতুলের বীজের অপকারিতা ও সতর্কতা:

যদিও তেঁতুলের বীজের অনেক উপকারিতা রয়েছে, তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি:

  1. অতিরিক্ত সেবন: যেকোনো কিছুর অতিরিক্ত সেবন ক্ষতিকর হতে পারে। তেঁতুলের বীজ অতিরিক্ত খেলে তা রক্তচাপ কমাতে পারে, যা হাইপোটেনশন রোগীদের জন্য বিপজ্জনক।
  2. এসিডিক প্রভাব: তেঁতুলের বীজে থাকা টারটারিক অ্যাসিডের কারণে এটি অতিরিক্ত খেলে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হতে পারে এবং পাকস্থলীতে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গিয়ে বুক জ্বালাপোড়া বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
  3. অ্যালার্জি: কিছু মানুষের তেঁতুলের বীজে অ্যালার্জি হতে পারে, যার ফলে ফুসকুড়ি, চুলকানি, ঘা, বমি বা শ্বাস নিতে অসুবিধার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
  4. গ্লুকোজের মাত্রা কমানো: যেহেতু এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, তাই যারা ডায়াবেটিসের ঔষধ গ্রহণ করছেন, তাদের তেঁতুলের বীজ ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এটি ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া করে রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত কমিয়ে দিতে পারে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া)।
  5. রক্তপাত বৃদ্ধি: কিছু গবেষণা অনুযায়ী, তেঁতুলের বীজ অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে রক্তপাত বৃদ্ধি করতে পারে, তাই যাদের রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা আছে বা রক্ত পাতলা করার ঔষধ নিচ্ছেন, তাদের এটি পরিহার করা উচিত।
  6. গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলা: গর্ভবতী মহিলা এবং যারা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, তাদের তেঁতুলের বীজ সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

গুরুত্বপূর্ণ দ্রষ্টব্য: তেঁতুলের বীজের অনেক উপকারিতা ঐতিহ্যবাহী ব্যবহারের ভিত্তিতে বলা হয়েছে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর কার্যকারিতা ও নিরাপত্তার বিষয়ে আরও বিস্তৃত ও নিয়ন্ত্রিত গবেষণার প্রয়োজন। তাই, কোনো রোগ নিরাময়ের জন্য এটি ব্যবহার করার আগে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক বা আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন