ন্যাচারাল মেকআপ করার নিয়ম

 



ন্যাচারাল মেকআপ এমন এক ধরনের মেকআপ, যা আপনার ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে তুলে ধরে, আড়াল করে না। এর উদ্দেশ্য হলো আপনার চেহারার সেরা বৈশিষ্ট্যগুলোকে হালকাভাবে হাইলাইট করা, যাতে মনে হয় আপনি খুব বেশি মেকআপ করেননি। এটি দিনের বেলায় বা হালকা অনুষ্ঠানের জন্য দারুণ উপযুক্ত।


ন্যাচারাল মেকআপ করার ধাপসমূহ

ন্যাচারাল মেকআপ করার জন্য ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়া ভালো:

১. ত্বক প্রস্তুত করা (Skin Preparation):

মেকআপ শুরু করার আগে ত্বক ভালোভাবে প্রস্তুত করা খুব জরুরি।

  • পরিষ্কার করুন: প্রথমে আপনার মুখ একটি হালকা ক্লিনজার দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
  • টোনার ব্যবহার: ত্বকের pH ভারসাম্য বজায় রাখতে একটি অ্যালকোহল-মুক্ত টোনার ব্যবহার করতে পারেন।
  • ময়েশ্চারাইজার: আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী একটি হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এটি ত্বককে হাইড্রেটেড রাখবে এবং মেকআপ মসৃণভাবে বসতে সাহায্য করবে।
  • সানস্ক্রিন (ঐচ্ছিক কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ): যদি দিনের বেলায় মেকআপ করেন, তাহলে একটি ভালো মানের সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

২. প্রাইমার ব্যবহার (Primer - ঐচ্ছিক):

প্রাইমার ব্যবহার করলে মেকআপ দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং ত্বক মসৃণ দেখায়। একটি লাইটওয়েট প্রাইমার ব্যবহার করতে পারেন, বিশেষ করে যদি আপনার ত্বক তৈলাক্ত হয় বা মেকআপ দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখতে চান।

৩. ব্লেমিশ কভার করা (Concealer):

ন্যাচারাল মেকআপে ফাউন্ডেশনের বদলে শুধু কনসিলার ব্যবহার করা হয়।

  • উপযুক্ত শেড: আপনার ত্বকের রঙের সাথে পুরোপুরি মিলে যায় এমন একটি কনসিলার বেছে নিন। চোখের নিচের কালো দাগ, ব্রণের দাগ বা ছোটখাটো খুঁত ঢাকতে এটি ব্যবহার করুন।
  • ব্যবহারের নিয়ম: অল্প পরিমাণে কনসিলার সরাসরি দাগের উপর লাগিয়ে নিন। এরপর একটি ছোট মেকআপ ব্রাশ, বিউটি ব্লেন্ডার বা আঙুলের ডগা দিয়ে হালকাভাবে ব্লেন্ড করুন, যাতে এটি ত্বকের সাথে মিশে যায়।

৪. ভ্রু সেট করা (Eyebrows):

ভ্রু আপনার চেহারায় একটি ফ্রেমের মতো কাজ করে।

  • আঁচড়ে নিন: একটি স্পুলি ব্রাশ দিয়ে ভ্রুগুলো আঁচড়ে নিন।
  • ফাঁকা জায়গা পূরণ: যদি ভ্রুতে কোনো ফাঁকা জায়গা থাকে, তাহলে ব্রাউ পেন্সিল বা ব্রাউ পাউডার দিয়ে হালকাভাবে তা পূরণ করুন। খেয়াল রাখবেন, রং যেন আপনার ভ্রুর স্বাভাবিক রঙের সাথে মিলে যায়।
  • সেট করুন (ঐচ্ছিক): একটি ক্লিয়ার ব্রাউ জেল দিয়ে ভ্রু সেট করে নিন, যাতে সারাদিন এটি ঠিক থাকে।

৫. চোখের মেকআপ (Eye Makeup):

ন্যাচারাল মেকআপে চোখের মেকআপ খুব হালকা হয়।

  • আইশ্যাডো (ঐচ্ছিক): একটি ন্যুড বা আর্থ টোনের হালকা ম্যাট আইশ্যাডো আপনার চোখের পাতায় ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার চোখকে আরও সতেজ দেখাবে।
  • আইলাইনার (ঐচ্ছিক): খুব চিকন করে একটি বাদামী বা কালো জেল/পেন্সিল লাইনার ব্যবহার করতে পারেন, যা চোখের পাপড়ির লাইনের ঠিক উপরে থাকবে।
  • মাস্কারা: হালকা এক বা দুই কোট মাস্কারা ব্যবহার করুন। এটি আপনার চোখের পাপড়িগুলোকে লম্বা ও ঘন দেখাবে, কিন্তু অতিরিক্ত ভারী মনে হবে না। বাদামী মাস্কারা ন্যাচারাল লুকের জন্য ভালো।

৬. ব্লাশ ব্যবহার (Blush):

ন্যাচারাল মেকআপে ব্লাশ একটি দারুণ ভূমিকা পালন করে।

  • ক্রিম বা পাউডার ব্লাশ: আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী একটি হালকা গোলাপী, পীচ বা কোরাল শেডের ক্রিম বা পাউডার ব্লাশ বেছে নিন।
  • ব্যবহারের নিয়ম: গালের আপেল অংশে (হাসলে গালের যে অংশ ফুলে ওঠে) হালকাভাবে ব্লাশ লাগিয়ে ব্রাশ দিয়ে উপরের দিকে কানের দিকে ব্লেন্ড করুন। এটি আপনার মুখে একটি সতেজ ও প্রাণবন্ত আভা আনবে।

৭. ঠোঁটের মেকআপ (Lip Makeup):

ঠোঁটের জন্য ন্যুড বা প্রাকৃতিক শেডের ব্যবহার ভালো।

  • লিপ বাম বা ন্যুড লিপস্টিক: একটি টিংটেড লিপ বাম, ন্যুড লিপস্টিক, অথবা আপনার ঠোঁটের স্বাভাবিক রঙের কাছাকাছি কোনো লিপ গ্লস ব্যবহার করুন।
  • ঠোঁট প্রস্তুত: ঠোঁট ফাটা থাকলে প্রথমে লিপ স্ক্রাব করে লিপ বাম লাগিয়ে নিন।

৮. মেকআপ সেট করা (Setting Spray/Powder - ঐচ্ছিক):

যদি আপনার মেকআপ দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখতে চান, তাহলে একটি হালকা সেটিং স্প্রে বা ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার ব্যবহার করতে পারেন।

  • সেটিং পাউডার: বিশেষ করে T-zone (কপাল, নাক, চিবুক) অংশে হালকাভাবে পাউডার লাগিয়ে অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

কিছু বাড়তি টিপস

  • কম পণ্য ব্যবহার: ন্যাচারাল মেকআপের মূল মন্ত্র হলো "কমই বেশি"। যত কম পণ্য ব্যবহার করবেন, ততই আপনার লুকটি প্রাকৃতিক মনে হবে।
  • সঠিক শেড: আপনার ত্বকের রঙ এবং আন্ডারটোনের সাথে মিলে যায় এমন শেডগুলো বেছে নিন।
  • ভালোভাবে ব্লেন্ড করা: মেকআপ ভালোভাবে ব্লেন্ড করা খুব জরুরি, যাতে কোনো কঠোর রেখা বা অসমতা না থাকে।
  • আলোর ব্যবহার: দিনের বেলায় প্রাকৃতিক আলোতে মেকআপ করুন, তাহলে বুঝতে পারবেন মেকআপের পরিমাণ ঠিক আছে কিনা।

ন্যাচারাল মেকআপ আপনার স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে এবং আপনাকে আত্মবিশ্বাসী ও সতেজ দেখাতে সাহায্য করে। এটি এমন একটি লুক যা সব সময় এবং সব জায়গায় মানানসই।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন