পিরিয়ডের ব্যথা (ডিসমেনোরিয়া) খুবই সাধারণ একটি সমস্যা, যা অনেক নারীর মাসিকের সময় অনুভব হয়। তীব্রতা কম হলে কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে এই ব্যথা কমানো যেতে পারে। নিচে কিছু কার্যকরী ঘরোয়া পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:
গরম সেঁক (Heat Therapy):
- তলপেটে, কোমরে বা যেখানে ব্যথা অনুভব হচ্ছে সেখানে গরম জলের বোতল বা হিটিং প্যাড দিয়ে সেঁক দিন।
- গরম জলের ব্যাগ না থাকলে গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে নিংড়ে নিয়েও ব্যবহার করা যেতে পারে।
- গরম পানিতে গোসল করলে বা শাওয়ার নিলে আরাম পাওয়া যায়।
- গরম সেঁক মাংসপেশি শিথিল করে এবং রক্ত চলাচল বাড়ায়, ফলে ব্যথা কমে।
হালকা মালিশ (Gentle Massage):
- হালকা হাতে তলপেটে গোলাকারভাবে মালিশ করলে ব্যথা কমতে পারে।
- আপনি চাইলে ল্যাভেন্ডার বা রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েলের সাথে নারকেল তেল বা জলপাই তেল মিশিয়ে মালিশ করতে পারেন। এই তেলগুলোতে ব্যথানাশক এবং আরামদায়ক বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
ব্যায়াম ও যোগা (Exercise and Yoga):
- হালকা ব্যায়াম, যেমন - হাঁটা, স্ট্রেচিং বা যোগা করলে রক্ত চলাচল বাড়ে এবং ব্যথা কমতে সাহায্য করে।
- কিছু নির্দিষ্ট যোগাসন, যেমন - ভুজঙ্গাসন (Cobra Pose), মার্জারাসন (Cat-Cow Pose) এবং বালাসন (Child's Pose) পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে। তবে, মাসিকের সময় ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
আদা (Ginger):
- আদার মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- আদা চা পান করতে পারেন (এক ইঞ্চি আদা কুচি করে পানিতে ফুটিয়ে নিন)।
- সরাসরি অল্প পরিমাণে কাঁচা আদা চিবিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যায়।
তুলসী (Basil):
- তুলসীর মধ্যে ব্যথানাশক উপাদান রয়েছে।
- কয়েকটা তুলসী পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন অথবা তুলসী পাতা পানিতে ফুটিয়ে চা তৈরি করে পান করতে পারেন।
জোয়ান (Carom Seeds):
- জোয়ানের মধ্যে অ্যান্টিস্পাসমোডিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা পেটের পেশির খিঁচুনি কমাতে সাহায্য করে।
- এক চামচ জোয়ান সামান্য লবণ মিশিয়ে গরম পানির সাথে খেতে পারেন।
- অথবা, জোয়ান ভেজে তার ঘ্রাণ নিতে পারেন।
মেথি (Fenugreek Seeds):
- মেথির মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং ব্যথানাশক উপাদান রয়েছে।
- এক চামচ মেথি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি পান করতে পারেন।
ক্যামোমিল চা (Chamomile Tea):
- ক্যামোমিল চা মাংসপেশি শিথিল করতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- এটিতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যও রয়েছে।
পর্যাপ্ত ঘুম (Adequate Sleep):
- পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে বিশ্রাম দেয় এবং ব্যথা মোকাবেলায় সাহায্য করে।
সুষম খাবার (Balanced Diet):
- মাসিকের সময় স্বাস্থ্যকর এবং সহজে হজমযোগ্য খাবার গ্রহণ করা উচিত।
- প্রচুর পরিমাণে ফল, সবজি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান।
- প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি ও লবণ এড়িয়ে চলুন।
পানি (Water):
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং পেটের ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে, যা পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সহায়ক।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
- যদি ব্যথা খুব তীব্র হয় এবং ঘরোয়া উপায়ে না কমে।
- যদি ব্যথার সাথে অতিরিক্ত রক্তপাত হয়।
- যদি ব্যথার কারণে দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয়।
- যদি ব্যথার সাথে বমি, ডায়রিয়া বা মাথা ঘোরার মতো লক্ষণ থাকে।
- যদি দীর্ঘদিন ধরে পিরিয়ডের ব্যথা অনুভব করেন।
ঘরোয়া উপায়গুলো সাধারণত হালকা থেকে মাঝারি ব্যথায় আরাম দিতে পারে। তবে, যদি আপনার ব্যথা তীব্র হয় বা অন্য কোনো উপসর্গ থাকে, তবে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন