সিজারের পর সেলাই ফুলে যায় কেন

 

সিজারের পর সেলাই ফুলে যাওয়ার বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে কিছু স্বাভাবিক এবং নিরাময় প্রক্রিয়ার অংশ, আবার কিছু ক্ষেত্রে জটিলতার লক্ষণ হতে পারে। নিচে কারণগুলো আলোচনা করা হলো:

স্বাভাবিক কারণ:

  • প্রদাহ (Inflammation): যেকোনো অস্ত্রোপচারের পর ক্ষতস্থানে প্রদাহ হওয়া স্বাভাবিক। সিজারও একটি বড় ধরনের অস্ত্রোপচার। প্রদাহের কারণে ক্ষতস্থান এবং তার आसपासের টিস্যু ফুলে যেতে পারে। এটি নিরাময় প্রক্রিয়ার একটি অংশ এবং সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যে কমে যায়।
  • তরল জমা (Edema): গর্ভাবস্থায় শরীরে অতিরিক্ত তরল জমা হয় এবং সিজারের সময় দেওয়া আইভি ফ্লুইডের কারণেও এই তরলের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। এই অতিরিক্ত তরল ক্ষতস্থানের आसपासের টিস্যুতে জমা হয়ে ফোলা সৃষ্টি করতে পারে। এটি সাধারণত হাত, পা এবং মুখের সাথে পেটের আশেপাশেও দেখা যায়।
  • অভ্যন্তরীণ সেলাই: সিজারের সময় জরায়ু এবং পেটের বিভিন্ন স্তরে সেলাই দেওয়া হয়। এই অভ্যন্তরীণ সেলাইগুলির কারণেও পেটের ত্বক সামান্য উঁচু বা ফোলা মনে হতে পারে।

অস্বাভাবিক কারণ (চিকিৎসার প্রয়োজন):

  • ইনফেকশন (Infection): ক্ষতস্থানে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে ফোলা, লালচে ভাব, ব্যথা বৃদ্ধি, পুঁজ বের হওয়া এবং জ্বর আসতে পারে। এটি একটি গুরুতর জটিলতা এবং দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • হিমাটোমা (Hematoma): রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হলে ত্বকের নিচে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে, যা ফোলা এবং কালচে দাগ সৃষ্টি করতে পারে। ছোট হিমাটোমা সাধারণত নিজে থেকেই সেরে যায়, তবে বড় হিমাটোমার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
  • সেরোমা (Seroma): ক্ষতস্থানের নিচে সিরাম নামক তরল জমা হলে ফোলা অনুভূত হতে পারে। এটি সাধারণত ব্যথাহীন হয় এবং কিছু সময় পর শরীর নিজেই শুষে নেয়। তবে, বড় সেরোমার ক্ষেত্রে তরল বের করার প্রয়োজন হতে পারে।
  • অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া: সেলাইয়ের উপাদান বা অ্যান্টিসেপটিকের প্রতি অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হলে ক্ষতস্থানে ফোলা এবং চুলকানি হতে পারে।
  • ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (Deep Vein Thrombosis - DVT): যদিও এটি সেলাইয়ের সরাসরি কারণ নয়, তবে সিজারের পর রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ে। পায়ের গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধলে পায়ে ফোলা, ব্যথা ও লালচে ভাব দেখা দিতে পারে এবং এটি একটি গুরুতর অবস্থা।

ফোলা কমানোর উপায় (যদি স্বাভাবিক কারণে হয়):

  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম: শরীরকে সেরে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন।
  • পা উঁচু করে রাখা: শুয়ে থাকার সময় পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে পা উঁচু করে রাখুন।
  • হালকা হাঁটাচলা: রক্ত সঞ্চালন উন্নত করার জন্য ধীরে ধীরে হাঁটাচলা করুন, তবে অতিরিক্ত exertion এড়িয়ে চলুন।
  • ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান: পেটের উপর চাপ না পড়ে এমন আরামদায়ক পোশাক পরুন।
  • পর্যাপ্ত জল পান: শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা জরুরি।
  • ঠান্ডা সেঁক: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ফোলা স্থানে ঠান্ডা সেঁক দিতে পারেন।

কখন ডাক্তার দেখাবেন:

  • যদি ফোলা ক্রমশ বাড়তে থাকে।
  • যদি ফোলা স্থানে লালচে ভাব, গরম লাগা বা ব্যথা থাকে।
  • যদি ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বা দুর্গন্ধযুক্ত তরল বের হয়।
  • যদি জ্বর আসে।
  • যদি পায়ে হঠাৎ করে ফোলা এবং ব্যথা হয়।

সিজারের পর যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। তিনি আপনার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সঠিক কারণ নির্ধারণ করবেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করবেন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন