কোন কোন খাবার খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে

 

শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়, বিশেষ করে "খারাপ" কোলেস্টেরল (LDL) হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। কিছু নির্দিষ্ট খাবার LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে।

মূলত, স্যাচুরেটেড ফ্যাট (saturated fat) এবং ট্রান্স ফ্যাট (trans fat) সমৃদ্ধ খাবারগুলো রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়ানোর জন্য দায়ী। যদিও খাদ্যের কোলেস্টেরলও কিছু ভূমিকা রাখে, তবে স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাটই বেশি ক্ষতিকর।

এখানে যেসব খাবার খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে, তার একটি তালিকা দেওয়া হলো:

১. স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার:

এগুলো ঘরের তাপমাত্রায় সাধারণত কঠিন থাকে এবং বেশিরভাগ প্রাণীজ উৎস থেকে আসে।

  • লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত মাংস: গরুর মাংস, খাসির মাংস, ভেড়ার মাংসের চর্বিযুক্ত অংশ, সসেজ, বেকন, সালামি, হট ডগ।
  • চর্বিযুক্ত পোল্ট্রি: মুরগি বা হাঁসের চামড়া।
  • সম্পূর্ণ ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য: পূর্ণ ননিযুক্ত দুধ, মাখন, ঘি, পনির, ক্রিম, আইসক্রিম।
  • কিছু উদ্ভিজ্জ তেল: নারকেল তেল, পাম তেল (এগুলো উদ্ভিজ্জ হলেও স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে)।
  • ডিম: ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল থাকে। যদিও গবেষণায় দেখা গেছে, সুস্থ মানুষের জন্য প্রতিদিন একটি বা দুটি ডিম সাধারণত ক্ষতিকর নয়, তবে যাদের উচ্চ কোলেস্টেরল বা হৃদরোগের ঝুঁকি আছে, তাদের সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

২. ট্রান্স ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার:

ট্রান্স ফ্যাট শিল্পগতভাবে তরল উদ্ভিজ্জ তেলকে হাইড্রোজেনেটেড করে তৈরি করা হয়, যা তাদের শক্ত করে। এটি LDL কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং "ভালো" কোলেস্টেরল (HDL) কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়।

  • ভাজাপোড়া খাবার: ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, সিঙাড়া, পাকোড়া, সমুচা, ডুবো তেলে ভাজা যেকোনো খাবার।
  • বেকারি পণ্য: কুকিজ, কেক, পেস্ট্রি, ডোনাট, মাফিন।
  • প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাকস: চিপস, কিছু ধরনের ক্র্যাকার।
  • মার্জারিন: কিছু মার্জারিনে ট্রান্স ফ্যাট থাকতে পারে (বিশেষ করে যেগুলোতে "partially hydrogenated oil" লেখা থাকে)।

৩. উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার:

অতিরিক্ত চিনি সরাসরি কোলেস্টেরল না বাড়ালেও, এটি লিভারে ট্রাইগ্লিসারাইড নামক এক ধরনের চর্বি তৈরি করে, যা LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে এবং HDL কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

  • মিষ্টি পানীয়: সোডা, এনার্জি ড্রিংকস, কৃত্রিম ফলের রস।
  • মিষ্টি জাতীয় খাবার: ক্যান্ডি, কেক, পেস্ট্রি, মিষ্টি বিস্কুট, আইসক্রিম।

৪. প্রক্রিয়াজাত ও জাঙ্ক ফুড:

ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং জাঙ্ক ফুডগুলোতে প্রায়শই স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট, চিনি এবং লবণ প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা কোলেস্টেরল বাড়ানোর পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • ব্যক্তিগত পার্থক্য: সবার শরীর একই রকমভাবে কোলেস্টেরলের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায় না। কিছু মানুষের জিনগত কারণে কোলেস্টেরল বেশি থাকতে পারে, আবার কিছু মানুষের খাদ্যাভ্যাসের উপর বেশি প্রভাব পড়ে।
  • ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস: সুস্থ কোলেস্টেরল মাত্রা বজায় রাখার জন্য শুধুমাত্র খারাপ খাবার এড়িয়ে চললেই হবে না, বরং স্বাস্থ্যকর খাবার (যেমন ফল, সবজি, গোটা শস্য, স্বাস্থ্যকর তেল, চর্বিহীন প্রোটিন) বেশি পরিমাণে খাওয়া জরুরি।
  • জীবনযাপন: খাদ্যাভ্যাস ছাড়াও ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা এবং অতিরিক্ত ওজনও কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে।

যদি আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ে উদ্বেগ থাকে, তবে একজন চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তারা আপনার জন্য উপযুক্ত খাদ্যতালিকা এবং জীবনযাপন পরিবর্তন সম্পর্কে পরামর্শ দিতে পারবেন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন