কোন ভিটামিন খেলে ওজন বাড়ে

 


নির্দিষ্ট কোনো একটি ভিটামিন খেলে সরাসরি ওজন বাড়ে না, কারণ ভিটামিনগুলো ক্যালরি সরবরাহ করে না। ওজন বাড়ে যখন শরীরে গৃহীত ক্যালরির পরিমাণ খরচ করা ক্যালরির চেয়ে বেশি হয়। ভিটামিনগুলো শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে সাহায্য করে, যার মধ্যে বিপাক (metabolism) প্রক্রিয়াও অন্তর্ভুক্ত।

তবে, কিছু ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে ভিটামিন ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে, যেমন:

১. পুষ্টির অভাব পূরণ:

অনেক সময় পুষ্টির অভাবে শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় বা ক্ষুধার অনুভূতি প্রভাবিত হয়। যখন কোনো ব্যক্তি পুষ্টির অভাবে ভোগেন এবং সেই অভাব পূরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন গ্রহণ করেন, তখন তাদের শরীর সঠিকভাবে কাজ করতে শুরু করে। এর ফলে:

* ক্ষুধা বৃদ্ধি: কিছু ভিটামিনের অভাবে ক্ষুধা কমে যেতে পারে। যখন সেই অভাব পূরণ হয়, স্বাভাবিক ক্ষুধা ফিরে আসে এবং ব্যক্তি বেশি পরিমাণে খেতে শুরু করে, যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

* উন্নত হজম ও শোষণ: ভিটামিনগুলো খাদ্য থেকে পুষ্টি উপাদান শোষণে সাহায্য করে। যদি হজম বা শোষণে সমস্যা থাকে, তাহলে খাবার থেকে পর্যাপ্ত ক্যালরি বা পুষ্টি গ্রহণ করা কঠিন হয়। ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট এই সমস্যা দূর করতে পারে এবং খাদ্যের সম্পূর্ণ পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে, যা ওজন বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।

* মেটাবলিজম উন্নত করা: কিছু বি ভিটামিন (যেমন B1, B2, B3, B6, B12) কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট এবং প্রোটিনকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে। যদি এই ভিটামিনগুলোর অভাব থাকে, তাহলে মেটাবলিজম ধীর হতে পারে। সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের মাধ্যমে মেটাবলিজম স্বাভাবিক হলে, শরীর খাদ্যের শক্তিকে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে, যা ওজন বাড়ার পেছনে একটি পরোক্ষ কারণ হতে পারে।

২. কিছু ভিটামিন বি কমপ্লেক্স:

ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের কিছু ভিটামিন, বিশেষ করে ভিটামিন বি১ (থায়ামিন), বি২ (রিবোফ্লাভিন), বি৩ (নিয়াসিন), বি৬ (পাইরিডক্সিন) এবং বি১২ (কোবালামিন), খাদ্যের বিপাক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা কার্বোহাইড্রেটকে গ্লুকোজে, প্রোটিনকে অ্যামিনো অ্যাসিডে এবং ফ্যাটকে ফ্যাটি অ্যাসিডে রূপান্তরিত করে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে।

  • বি ভিটামিনের অভাব থাকলে: যদি এই ভিটামিনগুলোর অভাব থাকে, তাহলে শরীর খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত শক্তি তৈরি করতে পারে না, ফলে ওজন কমে যেতে পারে বা ওজন বাড়ানো কঠিন হতে পারে।
  • সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পর: যখন এই ভিটামিনগুলোর অভাব পূরণ করা হয়, তখন শরীর খাদ্যের পুষ্টি উপাদানগুলোকে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে, যার ফলস্বরূপ কিছু মানুষের ওজন বাড়তে পারে। তবে এটি মূলত অভাব পূরণজনিত ওজন বৃদ্ধি, অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণের কারণে নয়।

সারসংক্ষেপ:

কোনো ভিটামিন সরাসরি ক্যালরি সরবরাহ করে ওজন বাড়ায় না। তবে, যদি কোনো ব্যক্তির শরীরে নির্দিষ্ট ভিটামিনের ঘাটতি থাকে এবং এর ফলে ওজন কমে যায় বা ওজন বাড়ানো কঠিন হয়, তবে সেই ভিটামিনের অভাব পূরণ করার মাধ্যমে শরীর তার স্বাভাবিক কার্যকারিতা ফিরে পায়। এর ফলে ক্ষুধা বৃদ্ধি, উন্নত হজম এবং পুষ্টি শোষণ বৃদ্ধি পায়, যা পরোক্ষভাবে ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।

ওজন বাড়ানোর মূল উপায় হলো সুষম খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ক্যালরি গ্রহণ বাড়ানো এবং পেশী তৈরির জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করা ও শক্তি অনুশীলন করা। ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট শুধু তখনই কার্যকর যখন শরীরে তার ঘাটতি থাকে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন