নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর মোট ১১ জন স্ত্রী ছিলেন। তাঁর একাধিক বিবাহের পেছনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল, যা তৎকালীন আরবের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সম্পর্কিত।
নেককার স্ত্রী নিয়ে উক্তি
তাঁর একাধিক বিবাহের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. **সামাজিক ও মানবিক কারণ:**
* **বিধবা ও অসহায় নারীদের আশ্রয় ও সম্মান প্রদান:** তাঁর স্ত্রীগণের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন **বিধবা** বা **স্বামী পরিত্যক্তা** যারা তৎকালীন সমাজে অসহায় অবস্থায় ছিলেন। যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে অনেক নারী বিধবা ও আশ্রয়হীন হয়ে পড়তেন। নবীজি (সাঃ) তাঁদের বিয়ে করে সমাজে তাঁদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলেন।
* **ধর্মীয় শিক্ষা প্রচার:** এই স্ত্রীরা (যাঁদের "উম্মাহাতুল মু'মিনীন" বা মুমিনদের মাতা বলা হয়) ইসলামের বার্তা এবং নবীজির (সাঃ) ব্যক্তিগত জীবন, ইবাদত ও পারিবারিক শিক্ষা অন্যান্য নারীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
২. **রাজনৈতিক ও গোত্রীয় সম্পর্ক স্থাপন:**
* **ঐক্য ও মৈত্রী স্থাপন:** বিভিন্ন শক্তিশালী গোত্র ও নেতার কন্যা বা বিধবাদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে **সম্পর্ক ও মৈত্রী** স্থাপন করেন, যা নতুন মুসলিম উম্মাহর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ইসলাম প্রচারের জন্য অত্যন্ত সহায়ক ছিল।
* যেমন, তাঁর ঘনিষ্ঠ সাহাবী **আবু বকর (রাঃ)**-এর কন্যা **আয়েশা (রাঃ)** এবং **ওমর (রাঃ)**-এর কন্যা **হাফসা (রাঃ)**-কে বিবাহের মাধ্যমে তিনি তাঁর প্রধান সহচরদের সঙ্গে পারিবারিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় করেন।
৩. **ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:**
* **খাদিজা (রাঃ)-এর জীবদ্দশায় একবিবাহ:** নবীজি (সাঃ) তাঁর প্রথম স্ত্রী **খাদিজা (রাঃ)**-এর জীবদ্দশায় অন্য কোনো বিয়ে করেননি। খাদিজা (রাঃ)-এর মৃত্যুর পরই তিনি অন্যান্য বিয়েগুলো করেন, যখন তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৫০ বছর।
* **বিশেষ ঐশী অনুমতি:** প্রচলিত ইসলামী বিধান অনুযায়ী একজন মুসলিম পুরুষ একসঙ্গে চারজনের বেশি স্ত্রী রাখতে পারেন না। তবে নবীজি (সাঃ)-এর জন্য **আল্লাহর বিশেষ হুকুমে** এই নিয়মের ব্যতিক্রম ছিল (কোরআন ৩৩:৫০)।
এই বিবাহগুলি বেশিরভাগই মানবিক, শিক্ষাগত, এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করত, যা ইসলাম প্রচার ও নতুন মুসলিম সমাজ গঠনের জন্য অপরিহার্য ছিল।
নবীজি মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর মোট ১১ জন স্ত্রী ছিলেন। ইসলামি বর্ণনা এবং ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, নবীজির একাধিক বিবাহের পেছনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল, যা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তা ধর্মীয়, সামাজিক এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ছিল।
তাঁর একাধিক বিবাহের প্রধান কারণগুলি হলো:
* **সামাজিক সংস্কার ও বিধবাদের আশ্রয় প্রদান:** তৎকালীন আরবে যুদ্ধবিগ্রহের কারণে বহু নারী **বিধবা** বা **স্বামী পরিত্যক্তা** হয়ে পড়তেন এবং সমাজে তাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা ছিল না। নবীজি (সাঃ) এদের অনেককে বিবাহ করে তাদের **সম্মান ও নিরাপত্তা** নিশ্চিত করেছিলেন। **হযরত আয়েশা (রাঃ)** ছাড়া তাঁর বাকি সব স্ত্রী-ই ছিলেন বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা।
* **ইসলামী বন্ধন দৃঢ়করণ:** সে সময়ের আরব সমাজে গোত্রীয় সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নবীজি (সাঃ) বিভিন্ন **প্রভাবশালী গোত্রের** নেতাদের কন্যাকে বিয়ে করে তাদের সাথে **পারিবারিক সম্পর্ক** স্থাপন করেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি **ইসলামের দাওয়াত**কে আরও শক্তিশালী করতে এবং মুসলিম সমাজের মধ্যে **ঐক্য** প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। যেমন, তিনি হযরত আবু বকর (রাঃ) এর কন্যা আয়েশা (রাঃ) এবং হযরত উমর (রাঃ) এর কন্যা হাফসা (রাঃ) কে বিবাহ করেছিলেন।
* **ধর্মীয় শিক্ষা প্রচার:** নবীজির স্ত্রীরা, যাঁদেরকে **উম্মাহাতুল মু'মিনীন** বা **বিশ্বাসীদের মা** বলা হয়, তাঁরা পর্দার আড়ালে থাকা নারীদের কাছে নবীজির **ব্যক্তিগত জীবন**, **ইবাদত পদ্ধতি** এবং **পারিবারিক আচার-আচরণ** সম্পর্কে জ্ঞান ও শিক্ষা পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, নবীজি (সাঃ) **হযরত খাদিজা (রাঃ)**-এর জীবদ্দশায় অন্য কোনো স্ত্রী গ্রহণ করেননি। তিনি ২৫ বছর বয়সে খাদিজা (রাঃ)-কে বিবাহ করেন এবং ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁদের **মনোগামাস** বা একবিবাহিত জীবন ছিল। খাদিজা (রাঃ)-এর মৃত্যুর পরই তিনি বাকি বিবাহগুলি করেন।
এছাড়াও, ইসলামে সাধারণ পুরুষের জন্য একসাথে সর্বোচ্চ ৪ জন স্ত্রী রাখার অনুমতি থাকলেও, নবীজির জন্য আল্লাহ্র পক্ষ থেকে বিশেষ অনুমতি বা ব্যতিক্রম বিধান ছিল।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন