নবীজির স্ত্রী কেন ১১ জন


নবীজির স্ত্রী কেন ১১ জন



নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর একাধিক বিবাহের পেছনে বিভিন্ন ঐতিহাসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় **গুরুত্বপূর্ণ কারণ** ছিল। তাঁর মোট স্ত্রী ছিলেন ১১ জন, এবং ইসলামের দৃষ্টিতে এই বিয়েগুলো কোনো ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা ভোগের জন্য ছিল না।

 নবীজির স্ত্রী কেন ১১ জন

তাঁর একাধিক বিবাহের প্রধান কারণগুলো নিম্নরূপ:


### সামাজিক ও মানবিক কারণ

* **বিধবা ও অসহায় নারীদের আশ্রয় ও নিরাপত্তা প্রদান:** মক্কায় এবং তৎকালীন আরবে যুদ্ধবিগ্রহের কারণে অনেক নারী বিধবা ও অসহায় হয়ে পড়তেন। তাদের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নবীজি (সা.) অনেক বিধবা ও বয়স্ক নারীকে বিবাহ করেছিলেন। যেমন: হযরত **সাওদা বিনতে জাম'আ (রা.)** এবং হযরত **উম্মে সালামা (রা.)**। হযরত **খাদিজা (রা.)**-এর মৃত্যুর পর, যিনি ছিলেন একমাত্র কুমারী স্ত্রী, বাকি সকল স্ত্রীই ছিলেন বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা, কেবলমাত্র হযরত **আয়েশা (রা.)** ব্যতীত।

* **পালক পুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর সাথে বিবাহ:** আরবের সমাজে পালকপুত্রকে আপন সন্তানের মর্যাদা দেওয়া হতো এবং তার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিয়ে করা নিষেধ ছিল। এই প্রথা বাতিলের জন্য আল্লাহর নির্দেশে তিনি তাঁর পালকপুত্র **যায়েদ বিন হারেসা (রা.)**-এর তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী **হযরত জয়নব বিনতে জাহশ (রা.)**-কে বিবাহ করেন। এর মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ **ইসলামিক আইন** প্রতিষ্ঠিত হয়।


### রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণ

* **গোত্রীয় ঐক্য ও সম্পর্ক স্থাপন:** তৎকালীন আরবের বিভিন্ন গোত্র ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্ধুত্ব এবং রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপনের জন্য তিনি বিভিন্ন গোত্রের নারীকে বিবাহ করেছিলেন। বিয়ের মাধ্যমে শত্রু ভাবাপন্ন গোত্রগুলোর মধ্যে হৃদ্যতার সম্পর্ক তৈরি হয় এবং ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানো সহজ হয়। যেমন: হযরত **আয়েশা (রা.)** (হযরত আবু বকর (রা.)-এর কন্যা) এবং হযরত **হাফসা (রা.)** (হযরত উমর (রা.)-এর কন্যা)-এর সাথে বিবাহ। এই বিবাহগুলো তৎকালীন ইসলামের চার খলিফার সাথে পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল।

* **ধর্মীয় শিক্ষা প্রচারের সুবিধা:** নবীজি (সা.)-এর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের অনেক আচার-আচরণ ও শরীয়তের বিধান ছিল যা কেবল তাঁর স্ত্রীরাই ভালোভাবে জানতে ও প্রচার করতে পারতেন। মুসলিম **উম্মাহর মা** হিসেবে পরিচিত এই স্ত্রীরা (উম্মাহাতুল মুমিনীন) নবীজির কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে তা মুসলিম নারীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতেন। একাধিক স্ত্রী থাকায় এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি একজন স্ত্রীর ওপর বর্তায়নি, ফলে ধর্মীয় জ্ঞান প্রচারের পথ সুগম হয়।


ইসলামে সাধারণ মুসলিমদের জন্য একসাথে সর্বোচ্চ চারজন স্ত্রী রাখার বিধান রয়েছে, কিন্তু নবীজির (সা.) ক্ষেত্রে এই বিধান ছিল না এবং তাঁর এই একাধিক বিবাহ ছিল **আল্লাহর বিশেষ নির্দেশ ও উদ্দেশ্য** অনুযায়ী।


নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবদ্দশায় **মোট ১১ জন স্ত্রী** ছিলেন। এই একাধিক বিবাহের পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল, যা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তৎকালীন **সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় প্রয়োজন** মেটানোর লক্ষ্য ছিল।


মূলত, তাঁর একাধিক বিবাহের প্রধান কারণগুলি হলো:


* **সামাজিক সংস্কার ও বিধবাদের আশ্রয় প্রদান:** তৎকালীন আরবে যুদ্ধবিগ্রহের কারণে বহু নারী বিধবা ও অসহায় হয়ে পড়তেন, যাদের সমাজে কোনো আশ্রয় বা সম্মান ছিল না। নবীজি (সাঃ) এদের অনেককেই বিয়ে করে **সম্মান ও নিরাপত্তা** দিয়েছেন। তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে হযরত আয়েশা (রাঃ) ছাড়া প্রায় সকলেই ছিলেন **বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা বা যুদ্ধে স্বামীহারা**।

* **গোত্রীয় ও রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন:** বিবাহের মাধ্যমে বিভিন্ন শক্তিশালী আরব গোত্রের সাথে **বন্ধুত্ব ও মৈত্রী** স্থাপন করা তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল। এর ফলে ইসলামের দাওয়াত ও প্রভাব বিস্তার সহজ হয়েছিল এবং অনেক গোত্র ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, কোনো গোত্রের প্রধানের মেয়েকে বিয়ে করার ফলে সেই গোত্রের অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

* **গুরুত্বপূর্ণ সাহাবীদের (সঙ্গী) সাথে আত্মীয়তার বন্ধন সৃষ্টি:** তাঁর ঘনিষ্ঠতম সাহাবীদের সাথে **পারিবারিক সম্পর্ক** গড়ার মাধ্যমে উম্মাহর (মুসলিম সম্প্রদায়) ভিত্তি আরও মজবুত করা। যেমন— তিনি হযরত আবু বকর (রাঃ) এর কন্যা **আয়েশা (রাঃ)** এবং হযরত উমর (রাঃ) এর কন্যা **হাফসা (রাঃ)**-কে বিয়ে করেন।

* **ইসলামী বিধি-বিধান প্রচার ও শিক্ষাদান:** সেই সময়ে নারীদের জন্য কিছু বিশেষ ইসলামী বিধান ও অভ্যন্তরীণ পারিবারিক বিষয় শেখার প্রয়োজন ছিল, যা পুরুষের পক্ষে সরাসরি শেখানো সম্ভব ছিল না। নবীজির স্ত্রীগণ, যাদের **'উম্মাহাতুল মু'মিনীন' (মুমিনদের জননী)** বলা হয়, তাঁরাই মুসলিম মহিলাদের জন্য **শিক্ষক ও আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শকের** ভূমিকা পালন করতেন এবং তাঁদের কাছ থেকে অসংখ্য হাদিস ও ধর্মীয় জ্ঞান বর্ণিত হয়েছে।

* **আল্লাহর আদেশ**: কিছু বিবাহ সরাসরি আল্লাহর নির্দেশে সম্পন্ন হয়েছিল, যেমন হযরত জয়নব বিনতে জাহশ (রাঃ)-এর বিবাহ, যা দত্তক পুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করার প্রচলিত আরবী প্রথা বাতিল করার জন্য করা হয়েছিল।


গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো:


* নবীজি (সাঃ) তাঁর প্রথম স্ত্রী **হযরত খাদিজা (রাঃ)**-এর জীবদ্দশায় **২৫ বছর** বিবাহিত জীবন অতিবাহিত করেন এবং এই সময়ে তিনি **আর কোনো বিয়ে করেননি**।

* তাঁর সকল একাধিক বিবাহ হযরত খাদিজা (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর **৫০ বছর বয়সের পরে** সম্পন্ন হয়, যা তাঁর এই বিবাহের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বা জৈবিক ছিল না—এই বক্তব্যের একটি শক্তিশালী প্রমাণ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন