স্বামী-স্ত্রীর সহবাস সম্পর্কিত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস ও দিকনির্দেশনা রয়েছে। এখানে প্রধান কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো:
স্বামী স্ত্রী সহবাস সম্পর্কে হাদিস
**১. সহবাসের সওয়াব:**
* নবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, "(স্ত্রী মিলন করার মাধ্যমে) তোমাদের লজ্জাস্থানের মধ্যে সদকা রয়েছে।" সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, "হে আল্লাহর রসুল, আমাদের কেউ চাহিদা পুরা করবে, আর এর জন্য সওয়াব হবে?" নবী (সা.) বললেন, "বলো! যদি সে হারাম জায়গায় চাহিদা পুরা করত, তার গুনাহ হতো না? ঠিক তেমনি হালাল পথে চাহিদা পুরা করলে সওয়াব হবে।"
*(সহীহ মুসলিম: ১৪৩৬, জামে' আত-তিরমিজি: ১১৬০)*
**২. স্বামীর ডাকে স্ত্রীর সাড়া দেওয়া:**
* রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যদি কোনো পুরুষ নিজ স্ত্রীকে তার শয্যার দিকে ডাকে আর সে তাতে সাড়া না দেয়, অতঃপর সে (স্বামী) তার উপর রাগান্বিত হয়ে রাত্রি যাপন করে, তাহলে ফেরেশতারা তাকে সকাল পর্যন্ত লানত (অভিশাপ) করতে থাকে।"
*(সহীহ বুখারী: ৫১৯৩; সহীহ মুসলিম: ১৪৩৬)*
* অন্য এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "কোনো লোক তার স্ত্রীকে নিজ প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে ডাকলে সে যেন সাথে সাথে তার নিকট আসে, এমনকি সে চুলার উপর রান্না-বান্নার কাজে ব্যস্ত থাকলেও।"
*(জামে' আত-তিরমিজি: ১১৬০)*
*তবে মনে রাখা আবশ্যক, স্ত্রী অসুস্থ থাকলে বা একান্ত কোনো অসুবিধা থাকলে সাড়া না দেওয়ায় গুনাহগার হবেন না। ইসলামে সহবাসের ক্ষেত্রে জোর-জুলুমকে সমর্থন করা হয় না। উভয় পক্ষের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা ও সম্মতির ভিত্তিতেই অন্তরঙ্গতা কাম্য।*
**৩. সহবাসের স্থানের ব্যাপারে নির্দেশনা (যা বৈধ ও যা নিষিদ্ধ):**
* আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন: "তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য শস্যক্ষেতস্বরূপ। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেতে যেভাবে ইচ্ছা আগমন করো।" *(সূরা বাকারা: ২২৩)*
* এই আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "স্ত্রীর কাছে আসো সম্মুখ ও পেছন উভয় দিক দিয়ে—যদি তা **লজ্জাস্থান (যোনিপথ)** হয়।" *(তাবরানি, কাবির, ৭/৬২)*
* **নিষিদ্ধ স্থান:** স্ত্রীর পায়ুপথে সহবাস করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ (হারাম)। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি কোনো ঋতুমতী স্ত্রীর সঙ্গে কিংবা তার **পায়ুপথে** সংগম করে অথবা গণকের কাছে যায় এবং তার কথা বিশ্বাস করে, সে মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করল।" *(ইবনু মাজাহ: ৬৩৯)*
* রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, "যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর পশ্চাৎদ্বার দিয়ে সঙ্গম করে সে **অভিশপ্ত**।" *(আবু দাউদ: ২১৬২)*
**৪. সহবাসের দু'আ:**
* রাসূলুল্লাহ (সা.) সহবাসের আগে একটি দু'আ পড়তে বলেছেন:
**"بِسْمِ اللهِ، اَللّٰهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا"**
**অর্থ:** "আল্লাহর নামে (শুরু করছি)। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের থেকে শয়তানকে দূরে রাখো এবং আমাদের যে সন্তান দান করবে, তার থেকেও শয়তানকে দূরে রাখো।"
রাসূল (সা.) বলেছেন, এই দু'আ পড়ে সহবাস করলে যদি তাদের কোনো সন্তান হয়, তবে শয়তান তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
*(সহীহ বুখারী: ১৪১, মুসলিম: ১৪৩৪)*
**৫. সহবাসের আদব:**
* রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "তোমরা নগ্নতা হতে বেঁচে থাক। কেননা তোমাদের এমন সঙ্গী আছেন (কিরামান-কাতিবীন) যারা পেশাব-পায়খানা ও স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের সময় ছাড়া অন্য কোনো সময় তোমাদের হতে আলাদা হন না। সুতরাং তাদের লজ্জা কর এবং সম্মান কর।" *(জামে' আত-তিরমিজি: ২৮০০)*
* রাসূল (সা.) সহবাসের আগে স্ত্রীকে আলিঙ্গন, চুম্বন, মিষ্টি কথা ইত্যাদি দ্বারা মানসিকভাবে প্রস্তুত করার তাগিদ দিয়েছেন, পশুর মতো হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়তে নিষেধ করেছেন।
**৬. নিষিদ্ধ সময়:**
* **ঋতুস্রাব (হায়য) চলাকালীন:** কুরআনে ঋতুস্রাবকে 'অপবিত্র' বলা হয়েছে এবং এই সময় সহবাস করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, "তোমরা তাদের সঙ্গে (তাদের হায়েজ অবস্থায়) একই ঘরে অবস্থান ও অন্য কাজ করতে পারো শুধু সহবাস ছাড়া।" *(আবু দাউদ: ২৫৮, ২১৬৫)*
* **রোজা রাখা অবস্থায়:** ফরজ রোজা রাখা অবস্থায় দিনের বেলায় সহবাস করা হারাম।
এই বিষয়গুলো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের পবিত্রতা, অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করে।
স্বামী-স্ত্রীর সহবাস সম্পর্কে ইসলামের বিভিন্ন হাদিসে দিকনির্দেশনা ও গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিচে উল্লেখ করা হলো:
**১. সওয়াবের ঘোষণা:**
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "তোমাদের লজ্জাস্থানের মধ্যে সদকা রয়েছে।" সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, "হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের কেউ তার চাহিদা পুরা করবে, আর এর জন্য সওয়াব হবে?" নবী (সাঃ) বললেন, "বলো! যদি সে হারাম জায়গায় চাহিদা পুরা করত, তার গুনাহ হতো না? সুতরাং সে যখন হালাল জায়গায় (তার স্ত্রীর সাথে) চাহিদা পুরা করল, তার জন্য সওয়াব হবে।"
*(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭২০ এর কাছাকাছি)*
**২. স্ত্রীর প্রতি স্বামীর আহ্বান ও সাড়া দেওয়া:**
এ বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি রয়েছে। হাদিসে আছে,
* "যদি কোনো পুরুষ নিজ স্ত্রীকে তার শয্যার দিকে ডাকে আর সে তাতে সাড়া না দেয়, অতঃপর সে (স্বামী) রাগান্বিত হয়ে রাত্রি যাপন করে, তাহলে ফেরেশতারা তাকে সকাল পর্যন্ত অভিশাপ করতে থাকে।"
*(সহিহ বুখারি: ৫২৩৭; সহিহ মুসলিম: ১৪৩৬)*
* রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: "কোন লোক তার স্ত্রীকে নিজ প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে ডাকলে সে যেন সাথে সাথে তার নিকট আসে, এমনকি সে চুলার উপর রান্না-বান্নার কাজে ব্যস্ত থাকলেও।"
*(জামে আত-তিরমিজি, হাদিস: ১১৬০)*
**৩. সহবাসের নির্দিষ্ট ক্ষেত্র:**
স্ত্রীকে শস্যক্ষেত্রের সাথে তুলনা করে বলা হয়েছে:
* "তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য শস্যক্ষেতস্বরূপ। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেতে যেভাবে ইচ্ছা আগমন করো।"
*(সূরা বাকারা, আয়াত: ২২৩)*
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসূল (সাঃ) বলেছেন:
* "স্ত্রীর কাছে আসো সম্মুখ ও পেছন উভয় দিক দিয়ে—যদি তা লজ্জাস্থান হয়।" *(তাবরানি, কাবির, ৭/৬২ এর কাছাকাছি)*
* "শুধুমাত্র একই রাস্তায় (যোনিপথে) সহবাস করা যাবে।" *(মুসনাদ আহমদ: ৭/৬১ এর কাছাকাছি)*
**৪. নিষিদ্ধ স্থান ও সময়:**
নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে সহবাস করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ:
* **স্ত্রীর পায়ুপথে (মলদ্বার):** রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি কোনো ঋতুমতী স্ত্রীর সঙ্গে কিংবা তার পায়ুপথে সংগম করে অথবা গণকের কাছে যায় এবং তার কথা বিশ্বাস করে, সে মুহাম্মদ (সা. )-এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করল।" *(ইবনু মাজাহ, হাদিস: ৬৩৯)* অন্য হাদিসে আছে: "আল্লাহ (কেয়ামতের দিন) ওই ব্যক্তির দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না যে তার স্ত্রীর পায়ুপথে সহবাস করে।" *(ইবনে মাজাহ: ৬৩৯)*
* **ঋতুমতী (হায়েজ বা মাসিক) অবস্থায়:** আল্লাহ বলেন, "তারা আপনাকে হায়েযওয়ালী স্ত্রীদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলুন, তা অপবিত্র বস্তু। কাজেই হায়যকালীর সময়ে তোমরা তাদের সাথে একই ঘরে বসবাস করবে এবং সংগম ব্যতীত আর সবই করবে।" *(সূরা বাকারা, আয়াত: ২২২)*
**৫. সহবাসের দোয়া:**
সহবাসের পূর্বে এই দোয়া পড়া সুন্নত:
* **بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا**
* **উচ্চারণ:** বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শাইতানা ওয়া জান্নিবিশ শাইতানা মা রাযাকতানা।
* **অর্থ:** "আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের থেকে শয়তানকে দূরে রাখ এবং আমাদের যে সন্তান দান করবে, তা থেকেও শয়তানকে দূরে রাখ।"
রাসূল (সাঃ) বলেছেন যে, যদি তারা সহবাসের পূর্বে এই দু’আ পড়ে, আর তাদের মাঝে কোনো সন্তান আসে, তবে শয়তান তার কোনো ক্ষতি করতে পারে না।
*(সহিহ বুখারি: ৬৩৮৮)*
**৬. সহবাসের পর অজু ও গোসল:**
* সহবাসের পরে ঘুমাতে, পানাহার করতে বা পুনরায় মিলিত হতে চাইলে মধ্যখানে **অজু** করা সুন্নত।
* সহবাসের পর **গোসল (ফরয গোসল)** করা আবশ্যক।
ইসলাম স্বামী-স্ত্রীর মধুর সম্পর্ক এবং পরস্পরের অধিকার পূরণের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন