কাঁঠালের বীজ, যা সাধারণত ফল খাওয়ার পর ফেলে দেওয়া হয়, তা আসলে পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এটিকে "পুষ্টিগুণে টনিক" বা "নিউট্রিশাস টনিক" বলা হয়।
কাঁঠালের বীজের পুষ্টিগুণ:
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালের বীজে প্রায় ৯৮ ক্যালরি শক্তি থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে:
- কার্বোহাইড্রেট: প্রায় ৩৮.৪ গ্রাম
- প্রোটিন: প্রায় ৬.৬ গ্রাম
- ফাইবার: প্রায় ১.৫ গ্রাম
- চর্বি: মাত্র ০.৪ গ্রাম (খুবই কম)
- ভিটামিন: ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, থায়ামিন (ভিটামিন বি১), রিবোফ্লাভিন (ভিটামিন বি২), ভিটামিন বি১২
- খনিজ: ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম
কাঁঠালের বীজ খাওয়ার উপকারিতা:
- হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণ: কাঁঠালের বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার (দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় উভয়) থাকে, যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। কিছু ক্ষেত্রে এটি ডায়রিয়া নিরাময়েও ব্যবহৃত হয়।
- রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ: কাঁঠালের বীজে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে অপরিহার্য। এটি রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় সাহায্য করে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়। আয়রন মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সহায়ক।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: এতে থাকা ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি বিভিন্ন সংক্রমণ, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে হওয়া সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। কাঁঠালের বীজে থাকা "জাকালিন" নামক প্রোটিন এইচআইভি ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
- দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি: কাঁঠালের বীজে প্রচুর ভিটামিন এ থাকে, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভালো দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখতে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য: এতে থাকা উচ্চ পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। এছাড়াও, এতে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েড খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়।
- ত্বক ও চুলের যত্ন: কাঁঠালের বীজে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ ও সি ত্বককে সূর্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং বলিরেখা, কালো দাগ, ও অকাল বার্ধক্যের লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও সহায়ক। এর অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য মাথার ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
- মানসিক চাপ কমানো: কাঁঠালের বীজে থাকা প্রোটিন এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- পেশী গঠন: এতে থাকা উচ্চ মানের প্রোটিন পেশী গঠনে সহায়তা করে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: কাঁঠালের বীজে রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ এবং ফাইবার থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে পারে।
- শক্তি সরবরাহ: কাঁঠালের বীজে থাকা কার্বোহাইড্রেট এবং বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন শরীরকে শক্তি যোগায় এবং মেটাবলিজম বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- অ্যান্টি-ক্যান্সার বৈশিষ্ট্য: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁঠালের বীজে থাকা উদ্ভিদ যৌগ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ফ্ল্যাভোনয়েড, স্যাপোনিন এবং ফেনোলিক্স শরীরে প্রদাহ কমাতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং ডিএনএ ক্ষতি মেরামত করতে পারে। কিছু টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় এর অ্যান্টি-ক্যান্সার কার্যকারিতা দেখা গেছে।
- লিভার সুরক্ষা: এটি লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতেও সহায়ক।
কাঁঠালের বীজ সেদ্ধ করে, ভেজে বা বিভিন্ন তরকারিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি একটি পুষ্টিকর এবং উপকারী খাদ্য উপাদান, যা আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় যোগ করতে পারেন। তবে, যেকোনো রোগের চিকিৎসার জন্য এটি ব্যবহারের আগে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন