ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায় - এই প্রশ্নের সরাসরি এবং নির্দিষ্ট উত্তর দেওয়া কঠিন। কারণ মানুষের শরীরের ওপর ডায়াবেটিসের প্রভাব বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যেমন:
- ডায়াবেটিসের ধরন: টাইপ ১ বা টাইপ ২ ডায়াবেটিস।
- শারীরিক অবস্থা: রোগীর বয়স, অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা (যেমন হৃদরোগ, কিডনি রোগ)।
- চিকিৎসা: রোগী নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন কিনা এবং তা কতটা কার্যকর।
- জীবনযাপন: খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাস।
তবে, সাধারণভাবে বলা যায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি বা খুব কম হয়ে গেলে তা জীবন হানিকর হতে পারে। নিচে উভয় ক্ষেত্রেই বিপজ্জনক মাত্রা এবং সম্ভাব্য পরিণতি আলোচনা করা হলো:
রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি হলে (হাইপারগ্লাইসেমিয়া):
- কতটা বেশি বিপজ্জনক: রক্তে শর্করার মাত্রা ৬০০ মিগ্রা/ডিএল (মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার) বা তার বেশি হলে তা হাইপারস্মোলার হাইপারগ্লাইসেমিক সিনড্রোম (HHS) নামক একটি মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, রক্তে শর্করা ২৫০ মিগ্রা/ডিএল এর বেশি হলে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস (DKA) হওয়ার ঝুঁকি থাকে, বিশেষ করে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে। এই উভয় অবস্থাই জরুরি চিকিৎসা না করালে কোমা এবং মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
- লক্ষণ: অত্যধিক তৃষ্ণা, ঘন ঘন প্রস্রাব, বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, প্রস্রাবে কিটোন (DKA-তে), বিভ্রান্তি, এবং চেতনা হারানো (কোমা)।
রক্তে শর্করার মাত্রা খুব কম হলে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া):
- কতটা কম বিপজ্জনক: রক্তে শর্করার মাত্রা ৭০ মিগ্রা/ডিএল (৩.৯ মিলিমোল/লিটার) এর নিচে নেমে গেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া শুরু হতে পারে। মাত্রা ৪০ মিগ্রা/ডিএল (২.২ মিলিমোল/লিটার) এর নিচে নেমে গেলে তা গুরুতর হাইপোগ্লাইসেমিয়া হিসেবে বিবেচিত হয় এবং দ্রুত চিকিৎসা না করলে কোমা, খিঁচুনি এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
- লক্ষণ: কাঁপুনি, দুর্বলতা, ঘাম, দ্রুত হৃদস্পন্দন, মাথা ঘোরা, ক্ষুধা, ঝাপসা দৃষ্টি, বিভ্রান্তি, কথা বলতে অসুবিধা, আচরণে পরিবর্তন, এবং চেতনা হারানো (কোমা)।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
- হাইপারগ্লাইসেমিয়া বা হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
- গুরুতর হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত গ্লুকোজ বা মিষ্টি জাতীয় খাবার দিতে হয় এবং অজ্ঞান হয়ে গেলে গ্লুকোজন ইনজেকশন প্রয়োজন হতে পারে।
- হাইপারগ্লাইসেমিয়ার চিকিৎসার জন্য সাধারণত ইনসুলিন এবং অন্যান্য ঔষধের প্রয়োজন হয়।
পরিশেষে বলা যায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা চরম পর্যায়ে গেলে তা মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারে। সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন