প্রস্রাবে ইনফেকশন (Urinary Tract Infection - UTI) একটি অস্বস্তিকর সমস্যা। ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করে এর প্রাথমিক পর্যায়ে উপশম পাওয়া যেতে পারে, তবে মনে রাখবেন গুরুতর সংক্রমণ বা লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ঘরোয়া উপায়গুলো মূলত সংক্রমণের বিস্তার রোধ করতে এবং লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে।
প্রস্রাবে ইনফেকশনের ঘরোয়া উপায়:
- প্রচুর পরিমাণে জল পান করা: এটি UTI-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘরোয়া প্রতিকার। প্রচুর পরিমাণে জল পান করলে মূত্রাশয় থেকে ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস জল পান করা উচিত।
- ক্র্যানবেরি জুস পান করা: ক্র্যানবেরিতে এমন কিছু উপাদান থাকে যা মূত্রাশয়ের দেয়ালে ব্যাকটেরিয়া আটকে যাওয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। চিনিমুক্ত ক্র্যানবেরি জুস পান করা UTI-এর প্রাথমিক পর্যায়ে উপকারী হতে পারে। তবে, যাদের কিডনিতে পাথর বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা আছে, তাদের ক্র্যানবেরি জুস পানের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- বেকিং সোডা মিশ্রিত জল পান করা: এক গ্লাস জলে আধা চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে পান করলে প্রস্রাবের অ্যাসিডের মাত্রা কমে এবং প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া কিছুটা উপশম হতে পারে। তবে, এটি দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত নয় এবং যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ আছে তাদের এটি এড়িয়ে চলা উচিত।
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ: ভিটামিন সি মূত্রাশয়ের অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে, যা ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। লেবু, কমলা, আমলকি, পেয়ারা এবং অন্যান্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল ও সবজি খাদ্যতালিকায় যোগ করুন।
- প্রস্রাব চেপে না রাখা: যখনই প্রস্রাবের বেগ আসবে, তখনই তা ত্যাগ করা উচিত। প্রস্রাব চেপে রাখলে ব্যাকটেরিয়া মূত্রাশয়ে বংশবৃদ্ধি করার সুযোগ পায়।
- যৌনাঙ্গ পরিষ্কার রাখা: নিয়মিতভাবে যৌনাঙ্গ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ এটি স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়া ব্যালান্স নষ্ট করতে পারে।
- সহবাসের পর প্রস্রাব করা: সহবাসের পর প্রস্রাব করলে মূত্রনালীতে প্রবেশ করা ব্যাকটেরিয়া বেরিয়ে যেতে পারে।
- গরম সেঁক নেওয়া: তলপেটে গরম পানির ব্যাগ বা গরম তোয়ালে দিয়ে সেঁক নিলে ব্যথা এবং অস্বস্তি কিছুটা কম হতে পারে।
- আদা চা পান করা: আদার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা UTI-এর কারণে হওয়া প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা:
- যদি আপনার জ্বর, পিঠে ব্যথা, বমি বমি ভাব বা তীব্র পেটে ব্যথা থাকে, তবে এটি গুরুতর সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে এবং অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- গর্ভবতী মহিলাদের UTI হলে অবশ্যই ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতে হবে।
- ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- যদি ঘরোয়া উপায় अपनाने পরও ২-৩ দিনের মধ্যে অবস্থার উন্নতি না হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ঘরোয়া উপায়গুলো UTI-এর প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণ কমাতে সাহায্য করতে পারে, তবে এটি ডাক্তারের পরামর্শ ও চিকিৎসার বিকল্প নয়। সঠিক রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন